পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S sbr বঙ্গ-গৌরব পারস্য ভাষারও চর্চা করিয়াছেন। বাংলার মেয়েদের সঙ্গীত ও শিল্পকলা শিক্ষা দিবার জন্য তিনিই প্রথম এক সঙ্গীত-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিয়াছিলেন। সম্রাস্ত গৃহের বালকবালিকারা এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়া গীতবাদ্য শিক্ষার একটা সুযোগ লাভ করিয়াছিল। ইংরেজি ১৯০৫ সালে পাঞ্জাবের ব্যবহারজীব রাষ্ট্ৰীয়-কমী ও আর্যসমাজভুক্ত পণ্ডিত রামভজ দত্তচৌধুরীর সহিত শ্ৰীযুক্ত সরলা দেবী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছিলেন। এই বিবাহ তাহার প্রধান লক্ষ্য ছিল বীরপ্রসু পঞ্চনদের সঙ্গে বাংলার অন্তরঙ্গ সম্মেলন। এই মিলনের ফলে সরলা দেবী চৌধুরাণীর কর্মক্ষেত্র আরও নব নব দিকে প্রসারিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। স্বামীর প্রকৃত সহধর্মিণীর মতই তিনি আর্য সমাজের কার্যে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। ভারতের নানাস্থানে আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও গৌরব বৃদ্ধির জন্য বৃদ্ধির জন্য র্তাহাকে বক্তৃতা দিতে হইয়াছিল। এই সময় তিনি “ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল” নামে নারী জাতির সর্বপ্রকার উন্নতি ও কল্যাণের পন্থা-নির্দেশক একটি সমিতি প্ৰতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। আজও ইহা ভারতনারীর উন্নতিকল্পে ভারত ও ব্রহ্মের নানা শহরে, বিশেষত কলিকাতায় নানারূপ কাৰ্য করিতেছে। উচ্চ আদালতের আদেশক্রমে যখন পণ্ডিত রামভজ তাহার উর্দু সাপ্তাহিক “হিন্দুস্থানের” সম্পাদন ভার ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, শ্ৰীযুক্তা সরলা দেবী চৌধুরাণী স্বামীর সে ভার স্বহস্তে লইয়া অত্যন্ত যোগ্যতার সহিত “হিন্দুস্থান” সম্পাদন করিয়াছিলেন। “হিন্দুস্থানের” ইংরেজি সংখ্যা প্ৰকাশ করা আর এক গৌরবময় কীর্তি। রাজনৈতিক বিবিধ অশান্তির ঘূর্ণাবর্তে পড়িয়া তাহার স্বামীকে যখন নানা বিপদে ঘিরিয়াছিল, অসাধারণ সাহস ও তেজস্বিতার সহিত তিনি তখন স্বামীকে বহু প্রকারে সাহায্য করিয়াছিলেন। এই সময় মহাত্মা গান্ধীর সহিত রাজনৈতিক কার্যে দীর্ঘকাল অতিরিক্ত পরিশ্রম ও নানাস্থানে পরিভ্রমণ-জনিত অনিয়মের ফলে তিনি একবার সাঙঘাতিক পীড়াক্রান্ত হন। রোগশয্যায় সংসার ত্যাগের একটি দৈব প্রেরণা তাহার হৃদয়ে উদ্ধৃদ্ধ হয়। স্বামী বিবেকানন্দের সহিত তিনি একবার ঘনিষ্ঠ সংশ্রবে। আসেন। তঁহার বাণীই তঁহার চিত্তকে প্ৰথমে আধ্যাত্মিক চিন্তামাৰ্গে লইয়া যায়। হিমালয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত “মায়াবতী আশ্রমে তিনি কিছুকাল বাস করেন। এবার তাই রোগান্তে তিনি স্বামীর অনুমতি লইয়া সংসার-ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া নির্জনবাসে চলিয়া যান। হৃষীকেশের গঙ্গাকুলে এক আশ্রম নির্মাণ করিয়া তাপসীর ন্যায় তিনি সেখানে অধ্যাত্ম সাধনায় জীবন যাপন করিতেছিলেন। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ। হঠাৎ তাহার স্বামীর পীড়ার সংবাদে তাহার সেবার জন্য তিনি মুসৌরি পাহাড়ে যান এবং সেখানে স্বামীর মৃত্যু হইলে তিনি হৃষীকেশের আশ্রমে না ফিরিয়া নাবালক পুত্রের প্রতি জননীর কর্তব্য পালনের জন্য কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়া আসেন । অতি বিচিত্র ও কর্মময় জীবনের পথ বাহিয়া চিরদিন তাহাকে চলিতে হইতেছে বটে, কিন্তু তাহার মধ্যেও বাণীর আরাধনাকে তিনি কোনোদিনই অবহেলা করেন নাই। সাহিত্যিক প্রতিভা লইয়া তিনি জন্মিয়াছেন; কাব্যে ও সঙ্গীতে তঁাহাব জন্মগত অধিকার। তাই, দীপক দত্তচৌধুরী