পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO SR বঙ্গ-গৌরব সুতরাং রূপগুণ, বিদ্যাবুদ্ধি, অতুল বিভব-সব দিক দিয়া এমন গুণশালিনী রমণীকে পত্নীরূপে লাভ করিবার জন্য বহু যুবক ব্যগ্র হইয়া উঠিলেন। কিন্তু আগা মতােহর মৃত্যুর পূর্বে মানুজনকে তাহার এই ইচ্ছা ও আদেশ জানাইয়া গিয়াছিলেন যে, মনুজন যেন পারস্য দেশবাসী তাহার ভাগিনেয় 'সলাউদ্দিনের পাণিগ্রহণ করেন। পিতার এই অভিলাষ। অবগত হইবার পর হইতে সলাউদ্দিনকেই তিনি মনে মনে পতিত্বে বরণ করিয়া রাখিয়াছিলেন। সুতরাং ত্যাহার পাণিপ্রার্থী প্রত্যেক যুবককেই তিনি প্রত্যাখ্যান করিলেন। এইরূপে স্বার্থসিদ্ধির ব্যাঘাত ঘটায় তাহারা সকলে একযোগে মানুজনের শত্ৰু হইয়া দাঁড়ায় এবং নানা প্রকারে তাহার অনিষ্ট সাধন এমন কি প্ৰাণসংহার পর্যন্ত করিতে প্ৰয়াস পায়। মহসীন তখন গৃহে থাকিয়া সিরাজীর নিকট অধ্যয়ন করিতেন। ঘটনাক্রমে তিনি দুষ্টগণের চক্রান্ত বুঝিতে পারিয়া ভগিনীকে সতর্ক করিয়া দেন। এইরূপে কুচক্রীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হইয়া যায়। অতঃপর সলাউদ্দিন পারস্যদেশে হইতে হুগলিতে আসিয়া মানুজনের পাণিগ্রহণ করেন এবং পত্নীর বিষয়-সম্পত্তির অধিকারী হইয়া তাহার তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে মহসীনও শিক্ষালাভের জন্য বঙ্গদেশে ছাড়িয়া চলিয়া যান এবং দেশবিদেশে ভ্ৰমণ করিতে থাকেন। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যক্রমে বিবাহের কয়েক বৎসর পরেই মনুজন বিধবা হন এবং স্বামীশোকে কাতর হইয়া পড়েন। বিষয়সম্পত্তি, ধন-ঐশ্বর্যের প্রতি মানুজনের কোনোদিনই বিশেষ আসক্তি ছিল না ; বিশেষত স্বামীর মৃত্যুর পর এ দিকে র্তাহার আর কোনো আকর্ষণই রহিল না। র্তাহার ইচ্ছা হইল মহসীনের উপর বিষয়-সম্পত্তির ভার অর্পণ করিয়া তিনি নিশ্চিন্তু হইবেন । কিন্তু মহসীন যে তখন কোথায় ছিলেন, তাহা জানিতে না পারায় তাহার প্রতীক্ষাব্য তিনি বহু বৎসর কাটাইলেন। অবশেষে মনুজন যখন বৃদ্ধ হইয়া পড়িলেন এবং বিষয়সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করিবার র্তাহার ক্ষমতা রহিল না, সেই সময় অনেক কষ্ট ও অনুসন্ধানে মহসীনের খোঁজ পাওয়া গেল। মনুজন নিজের শরীরের অবস্থা জানাইয়া তীহাকে গৃহে ফিরিয়া আসিতে বার বার অনুরোধ করিয়া পত্র লিখিলেন। ভগিনীর কাতর অনুরোধ উপেক্ষা করিতে না পারিয়া মহসীন গৃহে ফিরিলেন। মনুজন তীহাকে তঁহার সমস্ত বিষয়বিভবের উত্তরাধিকার প্রদান করিয়া ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ইহলোক পরিত্যাগ করিলেন। সহসা ভগিনীর এই অতুল সম্পত্তির অধিকারী হইয়া মহসীনের মনে কোনো প্রকার প্রলোভন আসিল না! সংসারে ও র্তাহার আর কোনো বন্ধন ছিল না। সুতরাং তিনি র্তাহার বিশাল ভূসম্পত্তি দীনদুঃখীর সেবা এবং মানবসমাজের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত করিবেন স্থির করিয়া নিজের জীবনও দেশের হিতে উৎসর্গ করিয়া দিলেন। নানা প্রকারে মহসীন দীনদুঃখীর সেবা করিতেন। তঁহার হস্তাক্ষর অতি সুন্দর ছিল! কোরানের অনেক ভাল ভাল শ্লোক কাগজে নিজ হস্তে লিখিয়া তিনি ভিক্ষুকগণকে বিতরণ করিতেন। বহু ভিক্ষুক ঐ কাগজ বিক্রয় করিয়া প্রচুর অর্থ উপার্জন করিত। প্রতিদিন