পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wer বঙ্গ-গৌরব বিবেকানন্দের সাহস যে কি বিপুল ছিল, তাহার পরিচয় কন্যাকুমারীতে পাওয়া যায়। র্তাহার হাতে অর্থ ছিল না। তাই খেয়ার পয়সা না দিতে পারিয়া তিনি সমুদ্রে কঁপাইয়া পড়িয়া সমুদ্রের খাড়ি পার হইয়া মন্দিরে পৌঁছিয়াছিলেন। বিবেকানন্দ জীবনে কখন বিপদকে পৃষ্ঠ প্ৰদৰ্শন করেন নাই। তিনি বলিতেন, বিপদকে ভয় করিলেই বিপদ পাইয়া বসে। কিন্তু সাহস করিয়া যে বিপদের সম্মুখে দাঁড়ায়, বিপদ তাহার পদানত হইতে দ্বিধা করে না। এই সময়েই সিঙ্গুরাভেলু মুধলিয়রের** সঙ্গে বিবেকানন্দের পরিচয় হয়। মুধলিয়র মাদ্রাজের কোন এক কলেজের বিজ্ঞান-শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন। এই খ্রিস্টান পণ্ডিতটির মনে মনে পাণ্ডিত্যের অত্যন্ত গর্ব ছিল; তাই তিনি বিবেকানন্দের সহিত তর্ক করিয়া তাহাকে পরাজিত করিতে আসিয়াছিলেন। কিন্তু তর্কে বিবেকানন্দকে আঁটিতে না পারিয়া অবশেষে তাহার নিকট দীক্ষা গ্ৰহণ করেন। ইনি পরে “প্রবুদ্ধ ভারত” নামে ইংরেজি মাসিক-পত্ৰ প্ৰকাশিত করিয়া স্বামীজির প্রচার-কার্যের সহায় হইয়াছিলেন। মাদ্রাজে বিবেকানন্দের আরও বহু শিষ্য জুটিয়াছিল। সেতুবন্ধ রামেশ্বরের রাজা ভাস্করসেতুও স্বামীজির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়ে আমেরিকার চিকাগো সহরে “সর্ব-ধৰ্ম মহাসভা” নামে এক সভার আয়োজন চলিতেছিল। পৃথিবীর সকল দেশের ধর্মচার্যগণ সেখানে বক্তৃতা করিবার জন্য আহুত হইয়াছিলেন। বিবেকানন্দের ভক্তেরা তাহাকে ভারতবর্যের প্রতিনিধিরূপে সেখানে পঠাইবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিলেন। বিবেকানন্দ অস্বীকৃত হইলেন না; কিন্তু পাথেয় যাত্রাপথের দারুণ অন্তরায় হইয়া উঠিল। অবশেষে এক অদ্ভুত উপায়ে এ সম্বন্ধে সকল ভাবনার শেষ হইয়া গেল। খেতরির রাজার কোন সন্তান ছিল না। তিনি বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিলে স্বামীজি তাঁহাকে আশীর্বাদ করিয়াছিলেন- মহারাজ, আপনার পুত্র হইবে’। এ ভবিষ্যদবাণী সফল হইল। নবকুমারকে আশীর্বাদ করিবার জন্য রাজা গুরুকে স্বীয় রাজ্যে আহ্বান করিলেন। আমেরিকা-যাত্রার অর্থ সংগ্রহের জন্য বিবেকানন্দ তখন অত্যন্ত ব্যস্ত। গুরুর এই ব্যস্ততার সংবাদ অবগত হইয়া শিষ্য র্তাহার আমেরিকা-গমনের ব্যয়ভার বহন ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে বিবেকানন্দ মাদ্রাজ হইতে আমেরিকা যাত্ৰা করেন। কিন্তু আমেরিকায় পৌঁছিয়া তিনি দেখিলেন, যে কাৰ্যভার লইয়া তিনি যেখানে গমন করিয়াছিলেন, তাহ! সাধন সহজ নহে। যে কেহ ধৰ্মসভায় যে বক্তৃতা করিবেন, তাহার উপায় নাই। কেবল তাহারাই সেখানে বক্তৃতা করিতে পরিবেন, যাহারা কোন ধৰ্মসমাজ হইতে প্রতিনিধি হইয়া গিয়াছেন। স্বামীজি বিশেষ চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। স্থান সম্পূর্ণ অপরিচিত; বিশেষত র্তাহার অদ্ভুত বেশভূষা সেখানকার লোকদের সহানুভূতি আকর্ষণ না করিয়া বরং উপহাসের ও কৌতুহলের বস্তু হইয়া দাঁড়াইল। তিনি পথেঘাটে নানা রকমের লাঞ্ছিত হইতে লাগিলেন। মুদালিয়র পি. সিঙ্গারভেলু এই নামে বেশি পরিচিত।