পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় গদ্যসাহিত্য যেমন একেবারে ছিল না, তেমনি পদ্য সাহিত্যের কিছু বাড়াবাড়ি ছিল। চণ্ডীদাস, কৃত্তিবাস, কাশীদাস’ হইতে ভারতচন্দ্র,* ঈশ্বরগুপ্ত পর্যন্ত সকলেই এই সাহিত্যের সেবা করিয়াছিলেন, এবং পদ্যসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তবু যেন কিছুর অভাব ছিল; এমন যে সমৃদ্ধ সাহিত্য তাহারও যেন অসম্পূর্ণতা ছিল। বাংলা ভাষায় অমিত্ৰাক্ষর ছন্দ ছিল না। ভারতচন্দ্ৰ নূতন নূতন ছন্দের প্রবর্তন করিয়া ভাব প্রকাশের গণ্ডিকে অনেকটা প্রসারিত করিয়াছিলেন। পদ্মিনীর রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বঁধ ভাঙিব ভাঙিব করিয়াও ভাঙিতে পারেন নাই। যিনি সেই গণ্ডি কাটিয়া, সেই বাঁধ ভাঙিয়া, বাংলা কবিতায় উদাত্ত ধ্বনি ও দর্পিত ভঙ্গি দান করিয়াছিলেন, কবিতার স্রোতকে এক বিপুল ক্ষেত্রে আনিয়া প্রসার-বিপুল ও বেগ-দুর্বর করিয়া তুলিয়াছিলেন, তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। যশোহরের কপোতাক্ষী (মতান্তরে কপোতাক্ষ) তীরবতী সাগরদাঁড়ী তাহার জন্মস্থান। পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মাতার নাম জাহ্নবী দাসী। ১২৩০ সালের ১২ মাঘ মধুসূদনের জন্ম হয়। বিশেষ সম্রােন্ত বংশে তাহার জন্ম। র্তাহার পিতা কলিকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের বড় উকিল ছিলেন। তিনি খুব শৌখিন, বিলাসী, কবি, ভাবুক এবং আমোদপ্রমোদের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। পুত্ৰ মধুসূদনের চরিত্রেও সেই সমস্ত প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল। হাতেখড়ির পর মধুসূদন পাঠশালায় গেলেন। গুরুমহাশয় পারসি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন; তিনি পারসি কবিতা বাংলায় অনুবাদ করিয়া মধুকে শিখাইতেন। বাড়িতে মধুসূদন রামায়ণ মহাভারতের গল্প শুনিতেন; এবং যাত্রা, কবি, আগামনি, বিজয়া গান শুনিয়া তিনি কঁদিয়া ফেলিতেন। এইরূপে চারিদিক দিয়া তাহার কবিমনের উপকরণ সংগ্ৰহ হইতে লাগিল। পাঠশালার পড়া ছাড়াইয়া পিতা তাঁহাকে ইংরেজি পড়াইবার জন্য খিদিরপুরে লইয়া আসিলেন এবং সেখানকার ইংরেজি স্কুলে ভরতি করিয়া দিলেন। অতঃপর ইংরেজি ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু কলেজে ভরতি হন। মধুসূদনের বয়স তখন ১৩ বৎসর { কলেজে তখন দুইটি বিভাগ ছিল-জুনিয়র ও সিনিয়ার। তিনি জুনিয়ার শ্রেণিতে ভরতি হইয়া ডবল প্রমোশন লইয়া তিন বৎসরের মধ্যে সিনিয়ার শ্রেণির প্রথম বিভাগে প্রবিষ্ট হইলেন এবং একটা বৃত্তি পরীক্ষায় অপর ছাত্ৰাদিগকে পরাস্ত করিয়া একেবারে প্রথম স্থান অধিকারপূর্বক সেই বৃত্তি লাভ করিলেন। এই সময় তাহার কবি হইবার সাধ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠে। লিখিবার ইচ্ছা প্ৰবল, কিন্তু পত্রিক কোথায়! তিনি