পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরবিন্দ ঘোষ V যখন মিশিতেন, তখন বয়সের কথা যেন তাহার মনেই থাকিত না; শিশুর ন্যায় সরল ভাবে তিনি তাহদের সহিত হাস্যালাপ করিতেন। গুরুদাস নিষ্ঠাবান ধামিক ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। সামাজিক সকল ব্যাপারে তাহার আচারব্যবহার ছিল খাঁটি হিন্দু ব্ৰাহ্মাণের ন্যায়। কিন্তু তাই বলিয়া তাহার মনে সন্ধীর্ণতার স্থান ছিল না। সকল ধর্মের প্রতিই তাহার সমান শ্রদ্ধা ছিল। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর স্যার গুরুদাস আমাশয় রোগে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তঁহার বয়স ৭৫ বৎসর হইয়াছিল। স্যার গুরুদাস দরিদ্রের গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। শৈশবে পিতৃহীন হওয়ায় বহু কষ্ট ও অভাবের ভিতর দিয়া তাহাকে জীবনপথে অগ্রসর হইতে হয়। কিন্তু এই ঘাতপ্ৰতিঘাত সত্ত্বেও নিজের চেষ্টা, অধ্যবসায় ও প্রতিভাবলে তিনি জীবনসংগ্রামে জয়লাভ করিয়াছিলেন। ঐকাস্তিক আকাঙক্ষা লইয়া কোন কাজ আরম্ভ করিলে তাহা যে কখনও অসম্পন্ন থাকে না, ভবিষ্যৎ উন্নতি ও যশ অর্জনের পথে দরিদ্র্য যে অন্যতিক্রম্য বাধা নহে, গুরুদাসের জীবন ও কার্যাবলিই তাহার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অরবিন্দ ঘোষ ইংরেজি ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট কলিকতা নগরীতে অরবিন্দ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। অরবিন্দের পিতা কৃষ্ণধন ঘোষ তখনকার দিনে কলকাতার একজন খ্যাতনামা ডাক্তার ছিলেন। বাংলার অন্যতম মনীষী রাজনারায়ণ বসুর’ এক কন্যাকে তিনি বিবাহ করেন। ডাক্তারি ব্যবসায়ে যথেষ্ট উপার্জন সত্ত্বেও উচ্চতর চিকিৎসা-বিদ্যা শিক্ষালাভের জন্য তিনি বিলাত গমন করিয়াছিলেন। সেখানে প্রতিযোগিতামূলক আই-এম-এস পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হন। তাহার পর বিলাত হইতে যখন ফিরিয়া আসিলেন তখন তিনি একেবারে পুরাদস্তুর সাহেব, ইউরোপীয় শিক্ষা ও সভ্যতার প্রকাণ্ড পৃষ্ঠপোষক। এই ইউরোপীয় ভাবের ফলে কৃষ্ণধন বাবু আরবিন্দকে এবং অরবিন্দের অপর দুই জ্যেষ্ঠ সহােদরকেই সম্পূর্ণ ইউরোপীয়ভাবে শিক্ষিত করিয়া তুলিতে চেষ্টা করেন। অতি অল্প বয়সেই অরবিন্দকে দাৰ্জিলিং এর সেন্ট পলস্ স্কুলে ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। এখানে অরবিন্দকে ইউরোপীয় ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে থাকিয়া পড়াশুনা করিতে হইত। পিতা দেশেও পুত্রের পরিপার্শ্বিক আবহাওয়াটা বিদেশি করিয়া দিয়া তাহাকে সাহেব করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। সেই শিশুবয়সেও যাহারা অরবিন্দকে দেখিয়াছেন তঁাহারা বলেন, তঁহার চোখের ভিতর