পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশ্বিনীকুমার দত্ত ዒ እ» পারিতেন।” ইহা কম প্রশংসার কথা নহে ; স্যার রাসবিহারী ঘোষেরষ্ট ন্যায় উকিল বাংলাদেশে কেন, ভারতবর্ষেও দ্বিতীয় ছিল না। কিন্তু সত্যের অবতার অশ্বিনীকুমার অর্থের প্রলোভনে আকৃষ্ট হন নাই। এত বড় পাসার ত্যাগ করিয়া তিনি দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করিলেন। অশ্বিনীকুমার ওকালতি ত্যাগ করিয়া প্রথমেই তাহার পিতৃদেবের নামে স্থাপিত ব্ৰজমোহন বিদ্যা নিকেতনের উন্নতিকল্পে মনোনিবেশ করিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাহার যত্ন ও চেষ্টায়, তাহার অধ্যাপনার গুণে এবং সহকমী অধ্যাপকগণের একাগ্র অধ্যবসায়ে বরিশালের ব্ৰজমােহন কলেজ বাংলা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে উচ্চস্থান সেবার পবিত্র সৌরভ, তাহার ধর্মপরায়ণতা বরিশালের যুবক ছাত্রগণকে সর্বাংশে প্রতিষ্ঠাপন্ন করিয়া তুলিল। বরিশাল সর্ববিষয়ে বাংলার শীর্ষস্থানীয় হইল। অশ্বিনীকুমারকে কেন্দ্ৰ করিয়া নানা সদনুষ্ঠান শুধু বরিশাল নহে, সমস্ত পূর্ববঙ্গকে মহিমামণ্ডিত করিয়া তুলিল। ইহার কিছুদিন পরেই তদানীন্তন বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বাংলা দেশ দ্বিধাবিভক্ত হইল ; পূর্ববঙ্গের জন্য নুতন লাট নিযুক্ত হইল। এই বঙ্গভঙ্গ উপলক্ষে বাংলা দেশে যে আন্দোলন উপস্থিত হয়, অশ্বিনীকুমার তাহাতে যোগদান করেন। তঁহার তখন এমন প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল যে, বরিশালের আবাল-বৃদ্ধ তাহার আদেশ নতমস্তকে প্রতিপালন করিত। তিনি সে সময়ে যে সকল বক্তৃতা করিয়াছিলেন, তাহা অতুলনীয়। গভর্নমেন্ট তখন এই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বন্ধ করিবার জন্য বাংলাদেশের কয়েকজন প্রধান ব্যক্তিকে অস্তরিনে আবদ্ধ করিলেন। মহাত্মা অশ্বিনীকুমার তাঁহাদের অন্যতম। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর অশ্বিনীকুমার নির্বাসিত হন। সুদূর লক্লোয়ের কারাগারে তিনি আবদ্ধ ছিলেন। তাহাকে চৌদমাস কাল এই নির্বািসন-দণ্ড ভোগ করতে হয়। বাংলা সাহিত্যে অশ্বিনীকুমারের প্রধান দান তাহার ‘ভক্তিযোগ’ (* এমন উৎকৃষ্ট গ্রন্থ বাংলা ভাষায় নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্ৰষ্ঠ অশ্বিনীকুমারের ‘ভক্তিযোগ’ পাঠ করিয়া গ্ৰন্থকারকে লিখিয়াছিলেন, “আমার বিশ্বাস যে, এরাপ উৎকৃষ্ট গ্রন্থ আমি বাংলা ভাষায় সম্প্রতি দেখি নাই, অথবা বাংলা ভাষায় অল্পই দেখিয়াছি।” অশ্বিনীকুমার যে কেমন ভক্ত ছিলেন, তাহা তাহার রচিত একটি গানের একটি চরণেই বুঝিতে পারা যায়। তিনি লিখিয়াছেন, “লুকান মানিক তুলিবি যদি ডুব দে প্রেম সাগরের জলে।” ইহাই ছিল তঁহার জীবনের মূলমন্ত্র। কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথাও সেই কথাই বলিয়াছেন-“রাপসাগরে ডুব দিয়েছি। অরূপ রতন পাবার আশে।”