বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বড়দিদি
৪৮


 সম্প্রতি আবার একটা নূতন উপসর্গ জুটিয়াছে। বাগানবাটী প্রস্তুত হইয়াছে এবং তাহাতে নাকি এলোকেশী বলিয়া কে একটা মানুষ কলিকাতা হইতে আসিয়াছে। নাচিতে-গাহিতে খুব মজবুত, দেখিতে শুনিতেও মন্দ নয়। ভগ্ন মধুচক্র মৌমাছির মত বৈঠকখানা ছাড়িয়া ঝাঁক বাঁধিয়া ইয়ারের দল সেই দিকে ঝুঁকিয়াছে। তাহাদের আনন্দ ও উৎসাহ রাখিবার স্থান নাই; সুরেন্দ্রনাথকেও তাহারা সেইদিকে টানিয়া লইয়া গিয়াছে। আজ তিনদিন হইল–শান্তির স্বামিদর্শন ঘটে নাই। চার দিনের দিন সে স্বামীকে পাইয়া দ্বারে পিঠ দিয়া বলিল, “এতদিন ছিলে কোথায়?” “বাগানবাড়ীতে।” “সেখানে কে আছে যে, তিনদিন ধরে পড়েছিলে?” “তাই ত–”

 “সব কথায় তাই ত! আমি সমস্ত শুনেছি।” বলিতে বলিতে শান্তি কাঁদিয়া কহিল, “আমি কি দোষ করেচি যে, আমাকে পায়ে ঠেল্‌ছ?” “কৈ তা ত আমি–”

 “আবার কি করে পায়ে ঠেল্‌তে হয়? এর চেয়ে অপমান আমাদের আর কি আছে?” “তাই ত– তা– ওরা সব–”

 শান্তি যেন সে কথা শুনিতে পাইল না। আরো কাঁদিয়া কহিল, “তুমি স্বামী, আমার দেবতা! আমার ইহকাল! আমার পরকাল! আমি কি তোমাকে চিনিনে! আমি জানি, আমি তোমার কেউ নই, একদিনের জন্যও তোমার মন পাই না। এ যাতনা তোমাকে বল্‌ব কি! পাছে তুমি লজ্জা পাও, পাছে তোমার ক্লেশ হয়, তাই কোন কথা বলি না।”

 “শান্তি, কেন কাঁদ?”