নিবেদন করিল। রাজা অবিলম্বেই তাঁহাদের সংবর্দ্ধনা করিবেন, এই স্থির করিয়া, ব্রাহ্মণেরা আশীর্বাদ করিবার নিমিত্ত জলগণ্ডুষ হস্তে দণ্ডায়মান ছিলেন; এক্ষণে, ভঁহার অনাগমনবার্ত্তাশ্রবণে, করস্থিত আশীর্বাদবারি নিকটবর্ত্তী মল্লকাষ্ঠে ক্ষেপণ করিলেন; ব্রাহ্মণদিগের এমনই প্রভাব, আশীর্বাদবারি স্পর্শমাত্র, চিরশুষ্ক মল্লকাষ্ঠ সঞ্জীবিত, পল্লবিত ও পুষ্পফলে সুশোভিত হইয়া উঠিল।[১] এই অদ্ভুত সংবাদ তৎক্ষণাৎ নরপতিগোচরে নীত হইল। রাজা শুনিয়া চমৎকৃত হইলেন। তাঁহাদের আচার ও পরিচ্ছদের কথা শুনিয়া, প্রথমতঃ তাঁহার মনে অশ্রদ্ধা ও বিরাগ জন্মিয়াছিল; এক্ষণে বিলক্ষণ শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জন্মিল। তখন তিনি, গলবস্ত্র ও কৃতাঞ্জলি হইয়া, দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন, এবং দৃঢ়তর ভক্তিযোগ সহকারে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিয়া, ক্ষমাপ্রার্থনা করিলেন।[২]
অনন্তর, রাজা নির্ধারিত শুভ দিবসে সেই পঞ্চ ব্রাহ্মণ দ্বারা পুষ্টিযাগ করাইলেন। যাগপ্রভাবে রাজমহিষী গর্ভবতী ও যথাকালে পুত্রবতী হইলেন। রাজা, যৎপরোনান্তি প্রীত হইয়া, নিজ রাজ্যে বাস করিবার নিমিত্ত, ব্রাহ্মণদিগকে অত্যন্ত অনুরোধ করিতে লাগিলেন। ব্রাহ্মণেরা, রাজার নির্বন্ধ উল্লঙ্ঘনে অসমর্থ হইয়া, তদীয় প্রস্তাবে সম্মত হইলেন, এবং পঞ্চকোটি, কামকোটি,
- ↑ বিক্রমপুরের লোকে বলেন, বল্লালসেনের বাটীর দক্ষিণে যে দিঘী আছে, তাহার উত্তর পাড়ে পাকা ঘাটের উপর ঐ বৃক্ষ অদ্যাপি সজীব আছে। বৃক্ষ অতি বৃহৎ; নাম গজারিবৃক্ষ। এজাতীয় বৃক্ষ বিক্রমপুরের আর কোথাও নাই। ময়মনসিংহ জিলার মধুপুর পাহাড় ভিন্ন অন্যত্র কুত্রাপি লক্ষিত হয় না। মল্লকাষ্ঠ স্থলে অনেকে গজের আলানস্তম্ভ বলিয়া উল্লেখ করিয়া থাকেন।
- ↑ এই উপাখ্যান সচরাচর যেরূপ উল্লিখিত হইয়া থাকে, অবিকল সেইরূপ নির্দিষ্ট হইল।