পাতা:বাঁশবেড়িয়া বা বংশবাটী.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(১৬)

আলখাল্লা পরিয়া একতারা হস্তে মধ্যে মধ্যে গ্রামে বাউল সঙ্গীত করিয়া বেড়াইতেন। তা ছাড়া, নগর সঙ্কীর্ত্তন মধ্যে মধ্যে বাহির হইত। এখানে ব্রাহ্মসমাজ ছিল, তাঁহারা উৎসবের সময় নগর কীর্ত্তনে বাহির হইতেন, তাহাতে গ্রামস্থ সকলে যোগ দিতেন। একবার পূজ্যপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, প্রচারক নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রসিদ্ধ গায়ক রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতি নগর সঙ্কীর্ত্তনে গ্রাম তোলপাড় করিয়াছিলেন। সে অভিনব দৃশ্য এখনও বেশ মনে পড়িতেছে। এখানে হরি সভা ছিল—তাঁহাদেরও সঙ্কীর্ত্তনের দল বাহির হইত। বৈষ্ণবপ্রবর গৌরকান্তি নিমাই ও নিতাই ভাবাবেশে বিভোর হইয়া সকলকে মাতাইয়া তুলিতেন। এ সব যেন সেদিনের কথা বলিয়া
মনে হইতেছে—এখন গল্পের মত বলিতে হইতেছে। তথন দেশের স্বাস্থ্য এতটা মন্দ হয় নাই,—এতটা অভাব বোধ ছিল না। এখন লোকের ডাইনে আনিতে বামে কুলায় না। ঘরে অন্ন না থাকিলে, সচ্ছল অবস্থা না হইলে, স্বাস্থ্য ভাল না থাকিলে, যথেষ্ট অবসর না পাইলে, এত প্রাণ খুলিয়া স্ফূর্ত্তি কোথা হইতে আসিবে? নিদারুণ ম্যালেরিয়া ব্যাধিতে কঙ্কালসার দেহ লইয়া ভীষণ জীবন-সংগ্রামে কত দিন যুঝিতে পারিবে—আনন্দ স্ফূর্ত্তি তো দূরের কথা। এখনও প্রতিকারের সময় অতীত হয় নাই। ম্যালেরিয়া preventible disease—চেষ্টা করিলে রোগ নিবারিত হতে পারে। গ্রামের উন্নতির প্রধান অন্তরায় ম্যালেরিয়া। তাহা বিদূরিত করিতে না পারিলে, কোনও বিষয়ে স্থায়ী উন্নতির আশা নাই।

নিবেদন

 আমার পরম শ্রদ্ধেয় বন্ধু শ্রীয়ুক্ত মুণীন্দ্র দেবরায় মহাশয় বাঁশবেড়িয়ার সাধারণ পুস্তকালয়ের বার্ষিক উৎসব সভায় তাঁহার স্বগ্রাম বাঁশবেড়িয়ার সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। আমার সাগ্রহ অনুরোধে তিনি উক্ত প্রবন্ধটী বহু চিত্রশোভিত করিয়া ‘ভারতবর্ষে’র কার্ত্তিক মাসের সংখ্যায় প্রকাশিত করিয়াছেন। ইহা তাহারই পুনর্মুদ্রন। শ্রীয়ুক্ত দেবরায় মহাশয় লক্ষ্মীর কৃপাভাজন। তিনি যে বাণী-পূজায় অগ্রসর হইয়াছেন, ইহাতে সাহিত্যমোদী ব্যক্তিমাত্রই আনন্দিত হইবেন। আমিও সেই আনন্দ প্রকাশের জন্য এই সামান্য ‘নিবেদন’ তাঁহার সুলিখিত প্রবন্ধের সহিত গ্রথিত করিয়া কৃতার্থ হইলাম।

ভারতবর্ষ আফিস
কলিকাতা—আশ্বিন ১৩০১


প্রিণ্টার- শ্রীনরেন্দ্রনাথ কোঙার, ভারতবর্ষ প্রিণ্টিং ওয়ার্কস, কলিকাতা।