পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉ミbr বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Գb լ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী একাউন্ট ইনচার্জ, তিস্তা বীমা করপোরেশন সেন্ট্রাল রোড, রংপুর আমি ১৯৭১- এর ২৫ শে মার্চের পরপরই রংপুর শহর সেনাবাহিনীর কবলিত হবার সঙ্গে সঙ্গে শহর ত্যাগ করে নিকটবর্তী গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করি। যুদ্ধকালীন সময়ের প্রথম কয়েক মাসে সেনাবাহিনীর রংপুর শহর এবং শহরের আশে পাশে বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বাঙ্গালী নিধন যজ্ঞের আমি একজন উৎসাহী পর্যবেক্ষক ছিলাম। বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী কর্তৃক মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং সঠিক তারিখ আমি সযত্নে আমার ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করেছি। তথ্যগুলোর সত্যতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। ৮ এপ্রিলঃ রংপুর শহর থেকে আড়াই মাইল পশ্চিমে নাড়িরহাট গ্রামের ৪৭ জন গ্রামবাসীকে বর্বর বাহিনী ধরে এবং উক্ত স্থানে খোলাহাটে তাদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। আমার পরিচিত জনৈক ব্যক্তি দূর থেকে এ করুণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। ১৫ ই এপ্রিলঃ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে দক্ষিন পুর্ব দিকে দেওভোগ গ্রাম থেকে ২২ জন ক্ষেতে কর্মরত কৃষক এবং উক্ত এলাকার মসজিদ থেকে ১৫ জন নামাজরত ব্যক্তিকে খান সেনারা ধরে এবং গুলি করে হত্যা করে। মসজিদ থেকে লোক ধরে নির্মমভাবে হত্যা এলাকার গণমনে গভীর হতাশা এবং ক্রোধের সঞ্চার করে। এই হিংস্র কার্যকলাপের দরুন বহু গ্রামবাসী বাড়ী ঘর ত্যাগ করে ভারতে কিংবা দূর-দূরান্তরে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৭ ই এপ্রিলঃ এই সময়ে মাহীগঞ্জের (রংপুর শহর) ২ মাইল উত্তরে সাহেবগঞ্জের নিকট একটি ক্যানেলের উপরে বর্বর সেনা বাহিনী ১৭ ব্যক্তিকে হত্যা করে। এদের মধ্যে বেশ সংখ্যক ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীর জোয়ান। পোষাক পরা অবস্থায়ই তাঁদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গ্রামবাসীরা লুকিয়ে এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এবং পাকিস্তানী দস্য সৈন্যরা চলে গেলে তারা (গ্রামবাসী) বেঙ্গল রেজিমেন্টের লাশগুলো নিয়ে আসে এবং দাফন করে। মৃত জওয়ানদের প্রতি গ্রামবাসীদের ছিল অপূর্ব মমত্ববোধ। সবাই ১৯শে এপ্রিলঃ রংপুর ক্যান্টনমেন্টের নিকট ঘাঘট নদীর তীরে ১৫২ জন সাবেক বাঙ্গালী ই, পি, আর, কে খান সেনারা হত্যা করে। পিছনে হাত বেঁধে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে তাদেরকে হত্যা করা হয়। পরে (মৃত) লাশগুলোর অধিকাংশ বাঁশ দিয়ে গেথে ঘাঘট নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিশিষ্ট শিল্পী জনাব শাহ আলী সাহেবের বড় ভাই-র ছেলে (ই.পি.আর) কেবলমাত্র সৌভাগ্যক্রমে রক্ষা পান। ২৮শে এপ্রিলঃ দমদমা ব্রীজের নীচে সরকারী কারমাইকেল মহাবিদ্যালয়ের ৪ জন অধ্যাপককে গুলি করে হত্যা করা হয়। জনৈক অধ্যাপকের স্ত্রীকেও এখানে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। রংপুর শহর সাবেক জনতা ইনসুরেন্স কোম্পানীর অফিস ১১-৩০ মিনিটের সময় খান সেনারা তছনছ করে দেয়। আওয়ামী লীগের গোপন কাগজপত্র এ অফিসে রাখা হয়েছে সন্দেহে সৈন্যরা হানা দেয়। ২৯শে এপ্রিলঃ সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সমস্ত অফিস আদালতের হিসাব নিকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। রংপুর শহর ক্যান্টনমেন্টের কাছে সৈয়দপুরগামী পাকা রাস্তার পাশে ২১ জন নিরপরাধ বাঙ্গালীকে সেনাবাহিনী ধরে এবং গুলি করে হত্যা করে। তন্মধ্যে একটি অত্যন্ত কম বয়সী ছেলে বর্বর সৈন্যরা হত্যা করে। ছেলেটি হানাদার বাহিনীর সর্বপ্রকার যাতায়াত সংবাদ গোপন গেরিলা ঘাঁটিতে সরবরাহ করতো। পাকিস্তানপন্থী কুচক্রীরা এই ছেলেটিকে সেনাবাহিনীর নিকট ধরিয়ে দিয়ে ছিল।