পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ গণহত্যার কিছু দলিল দৈনিক বাংলা ১৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ নরঘাতকদের সংলাপ: ওদের খতম কর ড: মোজাম্মেল হোসেন লেখক ড: মোজাম্মেল হোসেন একজন বিজ্ঞানী। ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় বর্বর পাকিস্তানী সেনারা যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তখন পাকসেনাদের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কথোপকথন তিনি রেডিওতে শোনেন ও তার অংশবিশেষ টেপ রেকর্ডের ধরে রাখেন। ঐ টেপের বিশেষ অংশ কপি করে বন্ধুর সাহায্যে কোলকাতায় প্রেরণ করেন। মে, ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি আকাশবাণী’ কোলকাতা থেকে সংবাদ বিচিত্রায় তা শোনানো হয়। এছাড়াও কথোপকথনের সময় পাক সেনারা যে সব সাংকেতিক শব্দ করেছিল সেগুলিও যথাসাধ্য অনুবাদ করে অপর এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রেরণ করেন। মে মাসে আকাশবাণী কোলকাতা থেকে সংবাদ পরিক্রমায়’ তা শোনানো হয়। ২৩শে ডিসেম্বর বাং অভজার্ভার’এ এই বাৰ্ত্তা ছাপা হয়েছিল।] ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের কালরাত। সোয়াএকটার দিকে গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। জেগে ওঠার প্রথম মুহুর্ত থেকেই মন বলেছিল এ আর কিছু নয় পাকিস্তানী সেনারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুরো মার্চ ধরে অপেক্ষা করেছি, কি হয় কি হয়। আমরা কি স্বায়ত্তশাসন পাবো, না দেশে নামবে রক্তপাত? বিদেশীরা যখন ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছিল তখন মন বলেছিল, ওরা তো ওদের দেশে বিপদের সংকেত পেয়ে। কিন্তু বিপদ এলে আমরা তো এদেশেই থাকবো, আমাদের নিজের দেশ। কি হবে সেই বিপদ, কি হবে তার রুপ-তা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু সেই ভয়ংকর রাতে ঘুম ভাঙ্গতেই বুঝলাম, বিপদ এসে গেছে। শুরু হলো আমাদের ভাগ্যে অমাবস্যা। মনে প্রশ্ন জেঘেছিল কবে এই অন্ধকার কাটিয়ে আসবে আলো, আসবে স্বাধীনতা । হঠাৎ ভেঙ্গে যাওয়া ঘুমের ভাব কেটে গেল। উপলবন্ধি করার চেষ্টা করলাম কি হচ্ছে । মনে তখন সবার আগে একটি প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু নিরাপদে আছেন তো? কিন্তু কি ভাবে সে খবর? হঠাৎ মনে এলো, পাক সেনাদের বিভিন্ন ইউনিটগুলো নিশ্চয়ই একে অপরের সাথে রেডিও মারফত যোগাযোগ রাখবে। রেডিও তুলে নিয়ে ডায়াল ঘুরাতে আরাম্ভ করলাম। ৯০ মিটার পেয়ে গেলাম যা খজেছিলাম । হানাদার বাহিনীর দলগুলোর একে অপরের সাথে কথাবাৰ্ত্তা । জোরে শোনার উপায় নেই, তাই এয়ারফোন লাগিয়ে নিলাম কানে ভেসে আসতে লাগল বর্বর পশুদের গলা। ইতিমধ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের যুদ্ধ আরাম্ভ হয়েছে। পাক সেনাদের আগমনের গোড়াতেই কেউ সাইরেন বাজিয়ে বিপদ সংকেত জানাবার চেষ্টা করেছিল। আমাদের বাসা থেকে মাইলখানেক দূরে রাজারবাগ। সেকি প্রচণ্ড গুলি, তালা লেগে যায়। মাঝে মাঝে পাক সেনারা আকাশে ফানুস ছোড়ে। দিনের মতো আলো হয়ে যায় চারিদিকে। তারপর আবার বৃষ্টির মতো গুলি। মাঝে মাঝে ভেসে আসে ভারী গোলার শব্দ। একটু পরে গুলির তীব্রতা কমে এলো। বুঝলাম আমাদের বীর পুলিশ জন্মভূমির জন্য চরম আত্নোৎসর্গ করে শহীদ হয়েছেন। আরো একটু পরে দেখা গেল আগুনের লেলিহান শিখা-রাজারবাগ পুলিশ লাইন পুড়ছে। সে রাত্রের কথা জীবনে ভুলবো না। কখনো ছুটে যাই জানালায় আগুন দেখার জন্য। আবার ছুটে আসি রেডিও শোনার জন্য।