পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○のこ。 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড না, না, দরকার নেই। আপনি তো এখনই আবার চলে আসবেন।” মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী শেষ যাত্রার জন্য পা বাড়ালেন। পা বাড়াবার আগে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি তো অন্যায় কিছু করিনি, তুমি ঘাবড়াচ্ছো কেন? আমি এখনই চলে আসবো।’ অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও অধ্যাপক রাশীদুল হাসান একসাথে আজীবন থাকতে চেয়েছেন। দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় এক সাথে চলে এসেছিলেন। একজন চাকুরী নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, অপরজন ইংরেজী বিভাগে। আমি অধ্যাপক আনোয়ার পাশা এবং অধ্যাপক রাশীদুল হাসানের কথা বলছিলাম। যুদ্ধের সময় রাশীদুল হাসান নিজের বাসা ছেড়ে বন্ধু আনোয়ার পাশার বাসায় চলে আসেন। দু’বন্ধু এক সাথে থাকলে বুকে আশা থাকে, সাহস থাকে। চৌদ্দই ডিসেম্বর সকাল সাতটায় আনোয়ার পাশার ঘুম ভেঙ্গেছে। গড়িমসি করে বিছানা ছেড়েছেন আরো পরে। তারপর দু’বন্ধু মিলে ন’টার দিকে নাস্তা করেছেন, রেডিও শুনেছেন। ন’টার খানিক পরে আনোয়ার পাশার স্ত্রী পিছনের বারান্দা দিয়ে দেখলেন একটি লাল গাড়ী এসে থামলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার চতুরে। কয়েকজন রাজাকার নামলো। আনোয়ার পাশা এরই মধ্যে স্ত্রীর সাথে দু’একটা খুচরো সাংসারিক আলাপ সেরেছেন। রাশীদুল হাসানের সাথে গল্পে বসার আগে হাসতে হাসতে স্ত্রীকে বললেন, কাসুটা উঠুক তারপর তোমার জন্য ভালো করে বাজার টাজার করে দেব। রাশীদুল হাসানের স্ত্রী তখন সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর দরজায় নক। দরজা খুললেন আনোয়ার পাশার ছোট ভাই। তারা দরজার মুখে দাঁড়িয়ে। আনোয়ার পাশা আর রাশীদুল হাসান তখন ড্রইংরুমে। একজন আনোয়ার পাশাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, *আপনার নাম আনোয়ার পাশা।” ‘হ্যাঁ।’ আপনি বাইরে আসুন। এমন সময় তাদের চোখ পড়লো রাশীদুল হাসানের দিকে। জিজ্ঞেস করলো, “আপনার নাম? ‘রাশীদুল হাসান।” আপনিও চলুন।’ সেই সময় রাশীদুল হাসানের স্ত্রী এসে দরজার মুখে দাঁড়ালেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আনোয়ার পাশা এবং রাশীদুল হাসান একবার তার দিকে তাকালেন। চোখ তাঁদের ছলো ছলো। কিন্তু একেবারে নিশ্চপ তারা। ছলো ছলো চোখে দুজনে আরেকবার তাঁর দিকে (রাশীদুল হাসানের স্ত্রী) তাকিয়ে আস্তে আস্তে আল-বদরদের সাথে পা বাড়ালেন। আনোয়ার পাশার স্ত্রী জানালা দিয়ে শুধু দেখলেন তাদের গায়ের চাদরে তাদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।