পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

650 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড হটতে বাধ্য হয়েছে। চট্টগ্রামের বাড়ীতে বাড়ীতে গৃহশীর্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে। সমস্ত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার আনাচে কানাচে পাক ফৌজ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। সর্বত্র পাক পশুরা খতম হচ্ছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনতা মুক্তিবাহিনীর বিজয় অবধারিত জেনে বাংলাদেশের পতাকা গৃহে গৃহে উত্তোলন করেছেন। কুমিল্লা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত টাউন হল শীর্ষেও বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে বলে জানা গেছে। কুমিল্লা এখন বিস্ফোরণের শহর। প্রায় প্রতি মুহুর্তে সেখানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন কি ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের সময় কুমিল্লা বিমান বন্দরের দিক থেকে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। জানা গেছে সামগ্রিকভাবে কুমিল্লা জেলা পাক ফৌজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বাইরে থেকে প্রচুর সৈন্য সামন্ত আমদানী করেও তারা মুক্তিবাহিনীর সংগে এঁটে উঠতে পারছে না। যশোহরে গেরিলা তৎপরতার সামনে পাক ফৌজের সব প্রতিরোধ ব্যুহ ভেঙ্গে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের খন্ড খন্ড যুদ্ধে পাক ফৌজ যশোহরের দুই শতাধিক প্রাণ খুইয়েছে। যশোহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক ফৌজ হটে গেছে বলে জানা গেছে। টাংগাইল ও ময়মনসিংহ এখনো মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া ফেনী মহকুমা, দিনাজপুর জেলার অমরখানা, সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। -স্বাধীন বাংলা, ১২ জুলাই, ১৯৭১

:

মুক্তিফৌজের তৎপরতা ৩০শে জুন থেকে একমাত্র উত্তরখন্ডেই পাক ঘাঁটিগুলির ওপর ক্রমাগত আক্রমণে ও টহলদার সেনাদলের ওপর গুপ্ত অভিযান চালনায় অন্ত ১৮ জন পাকফৌজ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রীহট্ট খন্ডে সাফল্য মুক্তিফৌজ কমপক্ষে ৭ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে খতম করেছেন শ্রীহট্ট জেলার জকিগঞ্জ থানা এলাকায়। ঐ জেলারই জয়ন্তেয়াপুর অঞ্চলে আকস্মিক আক্রমণে তিনজন পাক ফৌজ নিহত হয়েছে। ংপুরে মুক্তিফৌজের অভিযান রংপুর জেলার মুক্তিফৌজ চিলাহাটির নিকটে একটি সামরিক ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালান এবং অন্ততঃ দুইজন পাকফৌজকে নিহত ও অনেককে আহত করেন। একই জেলার ঠাকুরগাঁও-এ একটি সেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিনাজপুর, পালিতলা ও ধীরগঞ্জ এলাকায় পাক সেনাবাহিনীর ওপর গোপন আক্রমণ চালনার ব্যাপারে গেরিলারা বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছেন। রাজশাহী ও দিনাজপুরে তৎপরতা গেরিলা বাহিনী ৩০শে জুন রাত্রে রাজশাহীর একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আক্রমণ চালান। এই আক্রমণের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়েছে। ওদিকে গতকাল দিনাজপুর জেলায় মুক্তিফৌজ একটি পাক টহলদার বাহিনীর ওপর গোপন আক্রমণ চালিয়ে ছয়জন খান সেনাকে খতম করেন। এরপর পাক সৈন্যেরা পশ্চিম বঙ্গের রাধিকাপুর গ্রামের বিপরীত দিকে দুইটি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়।