পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



675

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

বৈঠকে বোমা বিস্ফোরণ। মুক্তিযোদ্ধারা ইয়াহিয়ার দালালদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় নিরাপদে পালাইয়া যায়। পরে পাক দস্যুসোনারা আসিয়া ডাক বাংলোর আশেপাশে ব্যবপক তল্লাসী ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করিলেও গেরিলাদের টিকিটিরও নাগাল পায় নাই।

চালনা বন্দর মৃত

 আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানাইতেছেন যে, পাক সেনারা শহরে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করিতে পারে নাই। রোজ সকালে ৯টা হইতে ১২টা পর্যন্ত শহরে লোকজন আসে, জিনিসপত্র ক্রয়বিক্রয় হয়। পরে শহরের রাস্তাঘাট জনশূন্য হইয়া পড়ে। অফিসে কিছু কিছু কর্মচারী আসে কিন্তু কাজকর্ম হয় না।

 বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম খুবই বেশী। কাপড়-চোপড়, কেরোসিন তৈল, ঔষধপত্র দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু ধানচাউল খুব সস্তা। লুটপাট হয়রানি প্রভৃতির ভয়ে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলবস্থা চলিতেছে।

 চালনা বন্দর এখনও মৃত। শ্রমিকের অভাবে বন্দরের কাজকর্ম বন্ধ। পাক সেনারা প্রধানতঃ খুলনা, বয়রা ও মঙ্গলা ঘাঁটিতে থাকে। বাইরে বড় বেশি ঘোরঘুরি করেনা। কোথাও যাইতে হইলে বড় বড় দলে খুলনা হইতে ট্রাকযোগে কিম্বা মঙ্গলা হইতে গান বোটে যাতায়াত করে।

সাতক্ষীরা

 সাতক্ষীরায় মুক্তিবাহিনী কয়েকদিন আগে সীমান্ত এলাকার দুইটি পাক ঘাঁটি দখল করিয়া বাংলাদেশের পতাকা উড়াইয়া দিয়াছে। ঘাঁটি দুইটি হইল কাকডাঙ্গা ও বৈকারী। ইতিপূর্বে মুক্তিবাহিনী তলুইগাচা চান্দুরিয়া ক্যাম্প ও হিজলদী ক্যাম্প দখল করিয়া নেয়। চান্দুরিয়াহইতে বৈকারী এই সমগ্র এলাকা এখন মুক্তিবাহিনীর করতলগত।

 কাকডাঙ্গা ক্যাম্প হইতে পলায়নের সময় পাক সেনারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ ফেলিয়া যায়। মুক্তিবাহিনী উহাও দখল করিয়াছে।

 কাকডাঙ্গা হইতে পলায়নের পর পাক-বাহিনী হঠাৎ গঞ্জে আস্তানা গারে। মুক্তিবাহিনী তলুইগাছা হইতে পিছন দিক দিয়া গিয়া পাক-বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং ১৬ জন সৈন্য ও ৫ জন রাজাকার হত্যা করে।



-মুক্তিযুদ্ধ, ২২ আগষ্ট, ১৯৭১
* * * * *

রণাঙ্গনের খবর

চৌদ্দ গ্রাম

 আমাদের বীর মুক্তি যোদ্ধাগণ গত ১০ই আগষ্ট পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টারে অদূরে আমান গণ্ডাগ্রামে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১৩ জন হানাদার সৈন্যকে খতম এবং ১৭ জনকে মারত্মকভাবে আহত করেন।

 আর এক খবরে প্রকাশ, চৌদ্দগ্রাম-লাকশাম সড়কে মাইন বসিয়ে আমাদের মুক্তিবাহিনী একজন পদস্থ অফিসারসহ মোট ছয়জন শত্রসৈন্যের একটি জীপ উড়িয়ে দিয়েছেন। একই দিনে ট্রাঙ্ক রোডের বালুজুরী পুলের নিকট একদল শত্রু বাহিনীর উপর গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ ৯ জন হানাদারকে যমঘরে পাঠিয়ে দিতে সমর্ত হয়েছেন।