পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



693

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 সেপ্টেম্বর ১৪ তারিখে একমাত্র কুষ্টিয়া শহরের মুক্তিযোদ্ধারা খতম করিয়াছেন ১৩০ জন হানাদার দুশমনকে। ইহার পর হানাদারদের সাহার্য্যার্থে নতুন পাকিস্তানী সৈন্য আসিলে মুক্তিযোদ্ধারা তাহদের উপর প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালান। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করিয়া শত্রসৈন্যরা পশ্চাদপসারণ করিতে বাধ্য হয়। অতঃপর পাকিস্তানী বিমান বাহিনী তাহাদের সাহায্যে আগাইয়া আসিয়া নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করে।

 মুক্তিবাহনীর দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধারা গত আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহ হইতে ঢাকা শহর ও শহরতলী এলাকায় ব্যাপক গেরিলা আক্রমণ চালাইয়া যাইতেছেন। বাসাবো এলাকার একটি পাকিস্তানী ঘাঁটির উপর গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ চালান এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ইস্কাটন এলাকায় গেরিলারা এই সময়ে আরেকটি আক্রমণ চালান। এই দুইটি আক্রমণে প্রায় ২০ জন শত্রুসৈন্য প্রাণ হারায়।

 ইহা ছাড়া গেরিলারা চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানী মালবাহী বার্জ ডুবাইয়া দেন এবং বার্জের চালককে বন্দী করেন।

 মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা, নোয়াখালী, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালাইয়া শত্রসৈন্যদের নাজেহাল করেন।



-বাংলার বাণী, ২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

রণাঙ্গনে

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে সিলেটে ২টি শত্রুসৈন্যবাহী লঞ্চ নিমজ্জিতঃ

৪ শত খান সেনা নিহত

 আমাদের যোদ্ধারা গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশী সাফল্য অর্জন করেন সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। ছাতক ও সুনামগঞ্জের মধ্যবর্তী একটি এলাকায় গেরিলা যোদ্ধারা শত্রুসৈন্যবাহী ৪টি লঞ্চের একটি কনভয়ের উপর প্রচণ্ড চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ২টি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছেণ। এই আক্রমণে কমপক্ষে ৪ শত পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন আগে তারা ছাতকের উত্তর দিকে শক্র অবস্থানের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে শত্রপক্ষের হতাহতের সংখ্যা নির্ণয় না করা গেলেও রেডক্রসের গাড়ীতে করে খান সেনাদের লাশ সরাতে দেখা যায়। নীলপর গ্রামের নিকট মুক্তিসেনাদের পোঁতা মাইনে অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই একটি পাক সামরিক যান বিধ্বস্ত হয়।

 জলিলপুরে মুক্তিবাহিনী ও পাক ফৌজের সাথে গোলাগুলি বিনিময়ের ফলে ৬ জন খান সেনা নিহত ও আরও ৭ জন আহত হয়।

খুলনায় দুইজন পাক সেনা খতম

 গত ১৩ই সেপ্টেম্বর খুলনা জেলার হরিনগরে গেরিলা যোদ্ধারা একটি পাকিস্তানী গানবোটের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপ করে ২ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করেছেন। গানবোটটি পানিতে ডুবে যায়।

বানারীপাড়ায় ২৮ জন পাক সৈন্য নিহত

 বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানায় এক সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী গত ৯ই সেপ্টেম্বর ২৮ জন পাকসৈন্য ও রাজাকারকে হত্যা করেছেন।

 প্রকাশ বাংলাদেশের গেরিলা যোদ্ধারা থানা সংলগ্ন একটি পুকুর সাঁতার কেটে পার হয়ে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ করেন এবং ট্রেঞ্চ ও প্রাচীর ধ্বংস করে তাদের হত্যা করেন।