পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



707

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 ফেনী হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, এ মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা মুহুরী নদী অতিক্রম করিয়া পরশুরাম এবং অনন্তপুরে শক্তিশালী প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। খান সেনারা মরিয়া হইয়া যুদ্ধ করিয়া উহাদের ১৯ জনকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হারাইয়া পিছনে হটিয়া যাইতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা খান সেনাদের পিছু ধাওয়া করিয়া ৪০ জনকে খতম করেন।

 অনন্তপুরে অষ্টাদশ পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের ৩০ জন খান সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে খতম হয়। বেলুনিয়া এলাকায় সংঘর্ষে খান সেনাদের একজন অফিসারসহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে গত সপ্তাহে খতম হয়।

 কুমিল্লা রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের সৈন্য বোঝাই একটি লঞ্চ গত ৪ঠা অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা কসবা এলাকায় নৌপথে ডুবাইয়া দেন। ইহাতে ২ শত খান সেনা খতম হয় এবং লঞ্চ বোঝাই অস্ত্রশস্ত্র নিমজ্জিত হইয়া যায়। ইহার আগের দিন মুক্তিযোদ্ধারা বাঞ্চারামপুর এলাকায় আরও একটি লঞ্চ ডুবাইয়া দিয়া ১০ জন হানাদার সৈন্য খতম করেন। এই এলাকাতেই মুক্তিযোদ্ধারা খান সেনাদের তিনটি স্পীডবোট এবং ১০ টি নৌকা ডুবাইয়া দিয়া একজন লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল ও একজন ক্যাপ্টেনসহ মোট ১৪ জনতে হত্যা করেন।

 উত্তর রণাঙ্গনে ভুরুঙ্গামরী, মোঘলাহাট, নওয়াবগঞ্জ, খঞ্জনপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা খান সেনাদের উপর বিভিন্ন আঘাত হানিয়া প্রায় ৬০ জনকে খতম করেন গত এক সপ্তাহে।

 ঢাকা হইতে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ঢাকা ও আশেপাশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করিকয়া ফেলিয়াছেন।

বঙ্গবন্ধু নৌবহর উদ্বোধন

(রণবার্তা পরিবেশক)

 গত শুক্রবার বাংলাদেশের কোন এক মুক্ত এলাকার নৌঘাঁটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের নৌবিভাগের একটি নৌবহরের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নামে এই নৌবহরের নামকরন করা হইয়াছে বঙ্গবন্ধু নৌবহর এক। উল্লেখযোগ্য যে, মুক্তিযোদ্ধাদের নীে ইউনিটের দুর্ধর্ষ গেরিলারা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দখলীকৃত জল এলাকা হইতে যে ৫টি লঞ্চ হানাদার সৈন্যদের কবল হইতে দখল করেন সেই ৫টি লঞ্চকে লইয়া প্রাথমিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নৌবহরটি গঠন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সৈয়দ নজরুলের ভাষণ

(রাজনৈতিক সংবাদদাতা)

 গত শনিবার বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলের কোন এক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অফিসার ট্রেনিং কোর্সের প্রথম দলের আনুষ্ঠানিক অভিষেক (পাসিং আউট সিরিমনি) উৎসবে বক্তৃতাকালে গণগ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই মন্তব্য করেন যে, ‘স্বাধীন বাংলার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ শত্রুর কারাগারে। যেদিন তিনি শত্রুমুক্ত ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশে আপনাদের অভিবাদন গ্রহণ করিতে পারবেন সেই দিনই অর্জিত হইবে মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত সাফল্য’। তিনি এবং প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানী এই অনুষ্টানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত তরুণ অফিসারদের অভিবাদন গ্রহণ এবং তাঁহাদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।

 অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি অফিসারদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও তাঁহাদের উদ্দেশ্যে অনলবর্ষী ভাষায় ভাষণ দান করেন। এই ভাষণে তিনি হানাদার বাহিনীর কবল হইতে দেশমাতৃকার মুক্তির ব্যাপারে তাঁহাদের গুরুদায়িত্ব ও