পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



709

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 সৈন্য খতম হয় এবং ৫ জন গুরুতরূপে আহত হয়। ভীত সন্ত্রস্ত খান সেনারা মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খেয়ে পলায়নকালে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও তাহদের পোশাকাদি ফেলেই কেটে পড়ে।

 উক্ত দিন মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসি যোদ্ধারা দস্যু সৈন্যদের ওপর আরো একটি আক্রমণ চালান। ফলে ৩ জন সৈন্য নিহত ও ১৩ জন আহত হয়।

 কুষ্টিয়া জেলার টংটর কাছে বেলগাছিয়া গ্রামে পাকিস্তানী সৈন্যরা হামলা চালায়। ফলে ১০ জন নিরীহ নাগরিক নির্মমভাবে নিহত হন।

 মুক্তিবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং ৫ জন খান সেনাকে খতম করেন।

 যশোর-খুলনা: পাজিঘাট, কারমার, যশোহর-খুলনা খণ্ডের পশ্চিমবাগ ও শ্যামপুকুর গ্রামের পাকিস্তানী ঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা হাল্কা মেশিনগান ও ভারী মর্টার ব্যবহার করেন। ফলে একুশ জন খান সেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর মর্টারে ৩টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়।

রংপুর খণ্ডে প্রচণ্ড সংঘর্ষ

 মুক্তি বাহিনীর অসম সাহসী যোদ্ধারা দুর্বার গতিতে পাকিস্তানী সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী অঞ্চলে ভুতমারীতে গেরিলা যোদ্ধার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে খান সেনাদের ওপর আক্রমন চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করেছেন।

 গত সপ্তাহে গেরিলা যোদ্ধার রউমারী এলাকায় ব্যাপক আক্রমন চলালে দখলদার ১০০ সৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া ২ শত রাজাকার গুরুতররূপে আহত হয়।

প্রধান সেনাপতির পূর্ব রণাঙ্গন সফর

 গত সপ্তাহে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানী পূর্ব রণাঙ্গনের অগ্রবর্তী অঞ্চল বিভিন্ন হাসপাতাল ও মুক্তি সেনাদের শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থান ভাষণ দেন।

 মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুক্তি সেনাদের কঠোর মনোবল, অমিত সাহস, দুর্জয় আত্মবিশ্বাস এবং আত্মোৎসর্গের বিপুল প্রেরনা দেখে গর্ববোধ করেন। তিনি তাঁহাদেরকে আরও তৎপর হতে এবং ত্যাগ স্বীকারের জন্য আহবান জানান। তিনি ভাষনদানকালে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা ও দেশাতুবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমগ্র জাতি তাদের এই দুঃসাহসী অভিযানের জন্য গর্বিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি তার ভাষণে আরও বলেন যে, ছয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তাতে করে আমাদের জনসাধারণের আত্মবিস্বাস আরও বেড়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপূর্ব গেরিলা রণকৌশলের প্রশংসা করে তিনি এ কথা বরেন, “আপনারা একটি জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার প্রশ্নেই আজ এ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। কঠোর আত্মপ্রত্যয় ও সাহসিকতা নিয়ে প্রচণ্ড দুর্যোগের মুখে দাড়িয়ে আপনার রণক্ষেত্র এক নজীর বিহীন সাফল্য অর্জন করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, আপনারা যদি শৃঙ্খলার সঙ্গে এভাবে লড়ে যান তাহলে সারা পৃথিবীতে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ 'সৈন্যবাহিনী' হিসেবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করতে পারবেন। কর্নেল ওসমানী অগ্রবর্তী হাসপাতালগুলো পরিদর্শনকালে রোগীদের শয্যাপাশে গিয়ে প্রাণ খোলা কথাবার্তা বলেন। তিনি কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদেরকে হাসপাতালের কর্মতৎপরতা ও রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি তাদেরকে স্বাধীনতার কাজে তাদের নিঃস্বার্থ সেবা ও ত্যাগ স্বীকারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে অগ্রবর্তী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সগণ সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। 

-জয় বাংলা, ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *