পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



719

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

  বুড়িমারী, ধবলসূতী, বাউড়ায় বাংলাদেশ সরকার কাষ্টম চেকপোষ্ট স্থাপন করে আমদানী ও রপ্তানী দ্রব্যের উপর কাষ্টম চার্জ নিচ্ছে। কয়েক মাসের হিসাবে দেখরাম। এই সব চেকপোষ্টে মাসে গড়ে প্রায় ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার আমদানী ও রপ্তানী কর হিসাবে পাচ্ছে। ধবলসূতী ক্যাম্প ইনচার্জ প্রাক্তন পাক-একসাইজ অফিসার- জনৈক হিন্দু ধর্মালম্বী মিঃ সরকার জানালেন যে আর কিছু ছোট ছোট চেক পোষ্ট স্থাপন করলে ও আরও তৎপর হলে ট্যাক্স আদায় অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

 বর্তমানে তামাকের উপর মণ প্রতি ট্যাক্স দশ টাকা, হাঁস-মুরগী প্রভৃতির উপর ঐ সবের বাজার দরের দুই শতাংশ ট্যাক্স হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে দেখলাম ৩২ টি আইটেমের উপর ট্যাক্স নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। 

-স্বদেশ, ২১ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলে মুক্তিফৌজের বীরত্বপূর্ণ লড়াই

(বিশেষ সংবাদদাতা)

 ময়মনসিংহ রণাঙ্গনে অবস্থিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির লিয়াজোঁ অফিস হইতে ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলের কলমাকান্দা, হালুয়াঘাট, নলিতাবাড়ী, নখলা প্রভৃতি থানার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কয়েকটি খবর আমাদের নিকট আসিয়া পৌঁছিয়াছে। এইসব থানায় উপুর্যপরি মুক্তিফৌজের আক্রমণে পাক বাহিনী বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছে। প্রায় দুইশত পাক সৈন্য ও রাজাকার খতম এবং বহু অস্ত্র ছিনাইয়া লওয়া হইয়াছে।

 মেশিনগান, রাইফেল ও গ্রেনেড সজ্জিত হইয়া মুক্তিফৌজের ৭০ জনের একটি দল এক অভিযানে ঠাকুরাকানার একটি পুল উড়াইয়া দিয়াছে। একই দিনে বেরাইলে একটি পুলিশ বাহনীর উপর আক্রমণ চালাইয়া থানার দারোগা, আনসার এডজুটেণ্ট প্রভৃতিকে গেপ্তার ও ৬টি রাইফেল হস্তগত করা হয়। বৈকাল বেলায় অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া ১৭ জন পাক সেনা খতম করা হয়।

কমলাকান্দা থানা

 মুক্তিফৌজের উপরোক্ত দলটি কমলাকান্দা থানা আক্রমন করিয়া ৪টি রাইফেল ১০ হাজার টাকার ঔষধ পত্র, নগদ ১৩৬৫ টাকা দখল করে। সংঘর্ষে ৫ জন রাজাকার নিহত ও থানার ছোট দারোগা আত্মসমর্পণ করে। থানা আক্রমণের পর নাজিরপুর যাওয়ার পথে পাক সৈন্যরা তাহদের আক্রমণ করে। সংঘর্ষে পাক বাহিনীর ১ জন মেজর সহ ১৭ জন সৈন্য ও রাজাকার খতম হয়।

 ঘণ্টা স্থায়ী সংঘর্ষে ১ জন কর্নেলসহ ২৭ জন পাক সেনা খতম হয়। একই দিন মুক্তিফৌজ নাজিরপুরে পাক সেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাইয়া ১৯ জন পাক সেনা ও রাজাকার খতম করে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রচণ্ড মার খাইয়া পাক সৈন্যরা আরও শক্তি বৃদ্ধি করিয়া ঝাঁপাইয়া পড়ে। তীব্র সংঘর্ষে আবার ১৪ জন পাক সেনাকে জীবন দিতে হয়। অপরপক্ষে মুক্তিবাহিনীর বীর (১) নুরুজ্জামান, (২) ভবেশদাস, (৩) দ্বিজেন্দ্রচন্দ্র বিশ্বাস, (৪) জামালুদ্দিন, (৫) ইয়ার মাহমুদ, (৬) ফজলুল হক ও (৭) ডাঃ আজিজুর হক শহীদ হন।

আটপাড়া থানা

 মুক্তিযোদ্ধারা আটপাড়া থানা আক্রমন করিলে পুলিশ আত্মসমর্পণ করে এবং স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় ৯ জন রাজাকার নিধন ও ১৭ টি রাইফেল দখল করা হয়।