পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



728

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

উল্লেখযোগ্য যে মেহেদী গঞ্জ থানার প্রায় সকল রাজাকার ও পাক দালাল বহু পূর্বেই খতম করা হয়েছে- মেহেদীগঞ্জ থানার সমুদয় অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে।

রাজাকার কমাণ্ডারের আত্মসমর্পণঃ রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন

 ৯ই অক্টোবর পুলিশগাঁও অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৩ জন পাকসেনা খতম হয়। অদিতমারীর উত্তরাঞ্চলে ভূতেশপুর পাক ঘাঁটি মুক্তিবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এই আক্রমণে তিনজন পাকসেনা নিহত ও পাঁচজন গুরুতর ভাবে আহত হয়। ৯ই অক্টোবর গাইবান্ধা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর কাছে বিপুলসংখ্যক রাজাকার আত্মসমৰ্পন করে। এছাড়া রংপুর জেলার হলিদাবাড়ি অঞ্চলের রাজাকার কমাণ্ডার হাবিবুর রহমান মুক্তিবাহিনীর কাছে অনেক অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৬ই আক্টোবর মুক্তিবাহিনীর মর্টার আক্রমণে দিনাজপুর জেলার ভাওয়ালগঞ্জ অঞ্চলের পাক ঘাঁটির বিপুল ক্ষতিসাধিত হয়এই আক্রমণে ১৭ জন শত্রসৈন্য নিহত হয়। 

-বিপন্নবী বাংলাদেশ, ২৪ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * * * * * *

মুক্তিবাহিনীর জোর প্রস্তুতি

 ঢাকা, ২১শে আক্টোবরণ্ডপবিত্র রমজান মাসের প্রাক্কালে প্রদত্ত এক বানীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন যে, মুক্তিবাহিনী এখন শত্রুর ওপর কঠোরতম আক্রমণ অভিযানের প্রস্ত্ততি চালাচ্ছে।

 তিনি বলেছেন, মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষের দিকে আমরা এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। মুক্তিবাহিনী অচিরেই হানাদারদের নির্মুল করতে পারবে বরে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

মন্দাভাগ অঞ্চলে মুক্তিফৌজের বিরাট সাফল্য

 ঢাকা, ১৯শে আক্টোবর-গতকাল রাত্রি ৩টায় মুক্তিফৌজ এক দুঃসাহসিক আক্রমণ চালিয়ে কুমিল্লা সেক্টরের মন্দাভাগ অঞ্চলের হানাদারদের একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে।

 প্রকাশ,এর পূর্ব্বদিন মুক্তিফৌজের টহলদার বাহিনী ৫জন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সাঁজোয়া বাহিনীসহ ঐ ঘাঁটির দুই পাশ থেকে প্রচণ্ড বিক্রমে আক্রমণ চালায়। তীব্র সংঘর্ষের পর ঘাঁটিটি মুক্তিফৌজ অধিকার করে নেয়। বাঙ্কারের মধ্যে তখণ ১৬৫ জন হানাদারদের মৃতদেহ, আর ৫জন আহতাবস্থায় কাতরাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্রও মুক্তিফৌজ সেখানে পায়।

 মৃতদেহ, ৫জন ধৃত হানাদার এবং অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিফৌজ তাদের হেডকোয়াটারে নিয়ে আসে। এই ঘাঁটিটি দখল করার ফলে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড হানাদার মুক্ত হয়েছে।

 এই ঘাঁটির পতনের সংবাদ পেয়ে আজ বেলা ৩ টায় পাক জঙ্গী বিমানগুলো উন্মাদের মত ঐ ঘাঁটি লক্ষ করে নাকি বোমা বর্ষণ করে। কিন্তু বিমান আক্রমণের আভাস পেয়ে মুক্তিফৌজের জওয়ানরা ঘাঁটির পার্শ্বস্থ একটি নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যায়। ফলে সরাসরি বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও মুক্তিফৌজের অদৌ কোন ক্ষতি হয়নি। পার্শ্বস্থ একটি গ্রামে বোমা পড়ায় ৩ জন শিশু এবং ২ জন বে-সামরিক ব্যাক্তি নিহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।