পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



732

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

গেরিলাদের সফল অভিযান অব্যাহত

 নবাবগঞ্জঃ গত ২৯শে অক্টোবর আমাদের মুক্তিবাহিনীর আটজন দুর্ধর্ষ গেরিলা নবাবগঞ্জ থানায় এক আক্রমণ চালিয়ে পাক হানাদার বদর বাহিনীর ৫২ জনকে হত্যা করে এবং ২৮ জন রাজাকারকে অস্ত্রশস্ত্রসহ বন্দী করে। এ সংঘর্ষে আমাদের মুক্তিবাহিনীর একজন বীরযোদ্ধা শহীদ এবং অপর একজন সদস্য আহত।

 লৌহজং; গত ২৬শে অক্টোবর শত্রুসৈন্যবাহী দু’টি স্পীড বোট শ্রীনগর থেকে যাত্রা করলে আমাদের বীর গেরিলারা পথিমধ্যে গোয়ালিনী মান্দ্রা বাজারের নিকট এক প্রবল আক্রমণে ৩৬ জন হানাদার সৈন্যকে নিহত এবং ৮ জনকে বন্দী করে। নিহতদের মধ্যে সুবেদার কোরবান আলী এবং ল্যান্স নায়েক মোনসের খানও রয়েছে। এ সংঘর্ষে দু’টি হালকা মেশিনগান ও ৩৪ টি রাইফেলসহ বেশ কিছু গোলবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।

 শ্রীনগরঃ গত ২৪শে অক্টোবর শ্রীনগর থানার কামারখোলা গ্রামে আমাদের মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাক সেনা ও রাজাকারদের একটি দলের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করে।

ছদ্মবেশী রাজাকার ধৃত ও নিহত

 গত ২৫শে অক্টোবর আমাদের গেরিলারা শেখেরনগরে একটি স্পীড বোটে তল্লাশী চালিয়ে চদ্মবেশী দু’জন বিহারী রাজাকার গ্রেফতার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের হত্যা করা হয়। সংবাদে প্রকাশ কয়েকদিন আগে গোয়েন্দাগিরি করতে এসে আরেকজন রাজাকার চুরাইনের জাগ্রত জনতার হাতে ধরা পড়ে প্রাণ দেয়।

 দালাল নিধনঃ গত ১৫ই অক্টোবর আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে হানাদার বাহিনীর দিশার কুখ্যাত দালাল মাওলানা আহমদ উল্লাহ ও তাঁর ছেলে বাহরুল ধরা পড়লে তাদেরকে গণআদালতে উপস্থিত করা হয়। দেশমাতৃকার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানীল প্রায়শ্চিত্তস্বরুপ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

রাজাকারদের আত্মসমর্পণ

 জয়পাড়া থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন গত ২৬শে অক্টোবর কিনাই মোল্লার ছেলেসহ ১২ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। 

-বাংলাদেশ, ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *

রাজধানীতেও পাক বাহিনী কোণঠাসা

 ঢাকা, ৩১শে অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকা শহরে খুবই সক্রিয় হওয়ায় পাক সৈন্যবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে লণ্ডনের সানডে টাইমস’ এ এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 সানডে টাইমসের বাংলাদেশস্থ সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, প্রায় আট শতাধিক গেরিলা সম্প্রতি ঢাকা শহরের কর্ম্মব্যস্ত অঞ্চলে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে। গেরিলাদের আক্রমণের ফলে পাক বাহিনীর বিমানঘাঁটি যাওয়ার পথে পিল বক্স তৈরী করেছে এবং পাকিস্তান ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের বিমানগুলি ওঠানামার পদ্ধতিও বদলে গেছে। এতদিন পর্যন্ত বোয়িং বিমানগুলি সব আলো জেলে ঢাকা বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করতো। কিন্তু এখন বিমানগুলি যথাসম্ভব বিনা আলোয় জলের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করছে।