পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



745

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গন

 গত ১৫ই নভেম্বর নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়ায় পাক সেনাদের উপর মুক্তিাবহিনীর গেরিলারা অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং ৫ জন পাক সেনা নিহত হয়।

 ঢাকা শহরে ও উপকণ্ঠে গেরিলাদের প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ বেসামাল হয়ে পড়ে এবং ১৭ই নভেম্বর সকাল ৫ টা থেকে ঢাকা শহরে আকস্মিকভাবে কার্য জারী করে এবং প্রতি বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালায়। মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাক সেনার বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

 রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গান; গত ১৬ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা রাজশাহী জিলার গোদাগারি এলাকায় পাক সেনাদের ঘাঁটি অবরোধ করে এবং প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালায়। ফলে ৬জন পাক সেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়। দক্ষিণ খোটকিবাড়িতে গেরিলারা ৩ জন শত্রু সৈন্য খতম করে। জাতিবাঙ্গা ও পাবেলিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে গেরিলারা রেল লাইন ধ্বংস করে ও শত্রুসৈন্যের চলাচল ব্যবস্থা বানচাল করে দেয়।

 রংপুর জেলার আটটি থানা সম্পূর্ণ পাক হানাদারমুক্ত। প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইলব্যাপী এলাকায় সাত লাখ জনতা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছে। এইসব এলাকায় বাংলাদেশ সরকার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে থানা পর্যায় পর্যন্ত প্রাশাসনিক কার্য পরিচালনা করছে।

 বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত; আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত এক সংবাদে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। এই এলাকার ফরিদপুর, আলাগলি, হাকিমপুর, বাকরআলি, রাধাকান্তপুর, পাংকা পিরোজপুর, পোলাডাঙ্গা, চিলমারী, সাহেবনগর প্রভৃতি সীমান্ত চৌকি থেকে মুক্তি বাহিনী পাকিস্তানী সেনাদের সম্পূর্ণরূপে হটিয়ে দিয়েছে। সেগুলি এখন মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।

 এছাড়াও নবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে ইসলামপুর, বারমারিয়ায উপর বাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর, ছোটকলকাতা, ইলশামারী, দেবনগর প্রভৃতি গ্রামগুলিতে ১৩ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে রাজাকার ও খান সেনাদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ঐ অঞ্চলের গ্রামবাসীরা মুক্তিবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেনে। মুক্তিবাহিনী এখানে ৫টি ৩০৩ রাইফেল দখল করেন ও পাঁচজন রাজাকারকে বন্দী করেন।

গেরিলাদের ব্যাপক আক্রমণ

 ময়মনসিংহ; ময়মনসিংহের ঘোষগাঁও এলাকা থেকে হানাদারদের বিতারিত করে মুক্তিবাহিনী তাদের দখল কায়েম করেছে।

 উত্তরবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গে অন্যতম সংযোগস্থল দেওয়ানগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও মুক্তিবাহিনী পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই এলাকাগুলোর মধ্যে আছে ডাংচর, চররামপুর, গামখাওয়া, হাতিবস্থা ইত্যাদি। এখানে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।

 ময়মনসিংহ জেলার আর ও একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকেও মুক্তিবাহিনী আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী পশ্চাদবরণ করতে বাধ্য হয়। এই জেলার তেলিখালিতে পাক সেনাদের একটি শক্ত ঘাঁটিতে গেরিলারা প্রবল আক্রমণ চালায়। এখানে ৬৯ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং ১ জন গেরিলাদের হাতে বন্দী হয়। গত ১৪ই নভেম্বর ময়মনসিংহের অন্য আর একটি অঞ্চলে গেরিলা সেনারা অতর্কিত আক্রমণে জনৈক জুনিয়র কমিশন সামরিক অফিসারসহ ৯ জন পাক সেনাকে খতম করে।

 গত কয়েক সপ্তাহের সংবাদে জানা যায় এই জেলায় গেরিলাদের ব্যাপক আক্রমণে দুই শতাধিক পাক সেনা ও রাজাকার হতাহত হয়েছে।