পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
751



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 একটির পর একটি এলাকা ছেড়ে পাক সেনারা পালাচ্ছে আর মুক্ত গ্রামগুলিতে মুক্তিবাহিনী ঢুকছেন বিরাট অভ্যর্থনা ও অভিনন্দনের মধ্যে। ঘরণ্ডবাড়ি শস্য জুলে যাক তবু মুক্তির আনন্দে ওঁরা এসে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ধরেন। ওরই মধ্যে রুটি, মাংস ডাব যা পারেন যতটা পারেন। তাই নিয়ে বিজয়ীদের অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে আসেন। দামুরহুদায় মুক্তিফৌজের জন্য খালেবলিয়া থেকে দর্শনা সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তাও তাঁরা বানিয়ে দিয়েছেন।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭শে নভেম্বর, ১৯৭১

বিজয় বার্তা

 ময়মনসিংহ: কিশোরগঞ্জের ৭টি থানা মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নিতে সমর্থ হয়েছেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরো ৬টি পুলিশ ঘাঁটি অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। তাজাস এলাকায় মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে এক প্লাটুন পাক সেনা খতম হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২ জন অফিসার আছে। মুক্তিবাহিনী এখানে একটি ভারী মেশিনগান ১টি ১৬ মিলিমিটার ও কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দখল করে নিয়েছেন।

 শ্রীহট্ট: ২৬ নভেম্বর। হাকিমগঞ্জে মুক্তিবাহিনী দুই কোম্পানী পাক সেনাকে অপসারিত করে দিয়েছেন। একজন ক্যাপ্টেন, একজন জে-সি-ওসহ ২৫ জন পাক হানাদারকে মুক্তিফৌজ আটক করেছেন। উত্তর শ্রীহট্টের জয়ন্তীপুরে এক তীব্র লড়াইয়ে ৩০ জন দখলদারী হানাদার নিহত হয়েছে। কয়েকটি সামরিক ট্রাক ভর্তি করে পাক বাহিনী হতাহত হানাদারদের নিয়ে যায়। এখন ডিগ্রাউ পূর্ণ শক্রকবলমুক্ত।

 রংপুর: রংপুর জেলায় মুক্তিবাহিনীর দুর্নিবার গতির সামনে পাক হানাদাররা বে সামাল হয়ে পড়েছে। হানাদারদের ঘাঁটি পারুলিয়া ধ্বংস করে মুক্তিফৌজ হাতী বাঁধা থানাটি সম্পূর্ণভাবে দখল করে নিয়েছেন। পাক বাহিনীর সিমোরা ঘাঁটিটিও মুক্তিফৌজ ধ্বংস করে দিয়েছে। রংপুরের রৌমারী, পাটগ্রাম, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও আরো অনেক মুক্ত এলকায় স্বাধীন বাংলার পতাকা পতপত করে উড়ছে।

 যশোর: মুজিবনগর, ২৬ নভেম্বর। খুলনা, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা প্রভৃতি রণাঙ্গনে পাক বাহিনী যেরূপ মুক্তিফৌজের হাতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে ঠিক একই ভাবে যশোরের উপকণ্ঠেও তারা বেসামাল। চারদিন ধরে প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিফৌজ পটাশ নদীর তীরবর্তী চৌগাছা দখল করে নিয়েছে। যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টমূখী মুক্তিবাহিনীর দুর্বার গতি ক্রমান্বয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। আজকের ভোরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যশোর ক্যাণ্টেনমেণ্টের অদুরবর্তী সিংহজুলি দখল করে নিয়েছেন।

 দিনাজপুর: ২৬ নভেম্বর। সফলতার পর সফলতা অর্জন করে মুক্তিসেনারা পূর্ব দিনাজপুর জেলার মগকুমা শহর পচাগড়ের পাক দুশমনদের শক্ত ঘাঁটি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দখল করে নিয়েছে। হানাদাররা মার খেয়ে ঠাকুরগাঁওর দিকে পালাতে শুরু করেছে। মুক্তিফৌজ ওদের পিছু ধাওয়া করে এগিয়ে চলেছে। ঠাকুরগাঁও সড়কে ময়দান দিঘিতে পাক হানাদাররা ঘাঁটি স্থাপন করেছে। মুক্তিফৌজ চতুর্দিক দিয়ে প্রবলভাবে আক্রমণ করে আজ ভোরে পচাগড় মুক্ত করে নিয়েছেন। পাক সৈন্যের কাছ থেকে মুক্তিবাহিনী প্রচুর অস্ত্র-শস্ত্র দখল করে নিয়েছেন। সরকারী ও বেসরকারী ভবনে এখন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে।

 পাবনা: ঈশ্বরদীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ মুক্তিযোদ্ধারা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন। থানা আক্রমণ করে অনেক অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নিয়েছেন। রেল লাইন ক্ষতিগ্রস্ত করায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

 রাজশাহী: নবাবগঞ্জ থেকে তিন মাইল দূরে ইসলামপুর ও চাটইডুবিতে অবস্থিত পাকফৌজের শক্র ঘাঁটির উপর মুক্তিবাহিনীর বীর সেনানীরা মর্টার ও মেশিনগান নিয়ে প্রবলভাবে আক্রমণ পরিচলনা করেন। নবাবগঞ্জের উপকণ্ঠে এই ঘাঁটিটির পতন হলে রাজশাহী-নবাবগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই অঞ্চলে আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে হানাদার বাহিনী রাজাকার দালালদের প্রথম এগিয়ে দেয় কিন্তু মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে প্রায় সবগুলি দালার খতম হয়। তারপর শুরু হয় পাক-আক্রমণকারীদের সাথে মুখোমুখি সংগ্রাম।