পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



760

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

রণাঙ্গণে কয়েকদিন তুমুল ষংঘর্ষের পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রসেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দখল করে নিয়েছে। হানাদার বাহিনী বিপুল হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পিছু হটছে আর মুক্তিবাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। রংপুর ও দিনাজপুরে মুক্তিবাহিনী ২৫০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্ত করে নিয়েছে। রংপুর জেলার আর একটি শহর মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। সিলেট জেলার শমসের নগর বিমান ঘাঁটিটি মুক্তিবাহিনী অবরোধ করে রেখেছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণ অব্যহত রয়েছে। বালুঘাটে তুমুল যুদ্ধ চলছে। অপর এক সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী সুনামগঞ্জের তাহেরপুর এলাকা মুক্ত করে নিয়েছে। নোয়াখালী রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা শত্রুসেনাদেরকে কোণঠাসা করে ফেনী শহরটি অবরোধ করে রেখেছে। ফেনী শহর দখল করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উপ্র প্রবল আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এখন তুমুল সংঘর্ষ চলছে। সংবাদে আরো প্রকাশ যে, বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন থানা হতে পাকসেনারা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ডায়েরী থেকে

মা
 তুমি আজ কোথায় জানি না। তোমার মত শত শত মায়ের চোখের জল মুছে ফেলার জন্য বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। আমি যদি মরে যাই তুমি দুঃখ করো না মা। তোমার জন্য আমার যোদ্ধাজীবনের ডায়েরী রেখে গেলাম আর রেখে গেলাম লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই তোমার ছেলে। আজ হাসপাতালে শুয়ে তোমার স্নেহমাখা মুখখানি বারবার মনে পড়ছে। আমার ডায়েরটা তোমার হাতে গেলে তোমার সকল দুঃখ দূর হয়ে যাবে। দেখবে তোমার ছেলে শত্রুকে পেছনে রেখে কোনদিন পালায়নি। যেদিন তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে আর বলেছিলে শক্রদেখে কোনদিন পেছনে আসিসনি বাবা। তুমি বিশ্বাস কর মা শক্রদেখে আমি কোনদিন পালাইনি। শত্রুর বুলেট যেদিন আমার বুকের বাঁদিকে বিধলো সেদিনও তোমার কথা স্মরণে রেখেছিলাম। মা, আমার সবচেয়ে আনন্দ কোথায় জান? আজ থেকে চারদিন পূর্বে একটি গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ বেদনাক্লিষ্ট একটি নারীকণ্ঠ ভেসে আসলো। কালবিলম্ব না করে সেদিকে দৌড়ে গেলাম। একটা গুলি আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল- আবার একটা। আবার বুঝলাম শত্ররা আমাকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছে তবু আমি এগিয়ে চলেছি। বাড়ীটার পিছনে একটা বাঁশঝাড়ের আড়ালে পজিশন নিলাম। দেখলাম বিবস্ত্রা একটি নারীদেহ নিয়ে কয়েকজন শত্রুপৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছে। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না মা। মনে পড়ে গেল বাংলার লক্ষ লক্ষ মায়ের কথা। শত্রকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লাম। ওরাও অনবরত গুলীবর্ষন শুরু করলো। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে। জানতে পারলাম আমার গুলিতে ৫ জন নরখাদক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। দোয়া করা মা। ভাল হয়ে আবার যেন তোমার শত শত সন্তানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারি।



ইতি



তোমার ছেলে



-বাংলাদেশ, ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ফেনী, টাঙ্গাইল, জকিগঞ্জ দখলেঃ সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ মুক্তিবাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে

(জন্মভূমির রনাঙ্গন প্রতিনিধি)

 বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমাগত পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার শত্রদের উপর আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে আস্তে আস্তে জঙ্গীশাহীর ভাড়াটিয়া সৈন্যদের সরিয়ে দিয়ে একের পর এক জায়গা গেরিলা যোদ্ধারা দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ মহকুমা এবং