পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



768

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 ভাওলিয়াবাজুতে ৫জন পাকসেনা ও ৩জন রাজাকার নিহত: বিলম্বে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে যে বাওয়া গ্রামে পাকদস্যুদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষ হয়; এ সংঘর্ষে ৫জন খানসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়।

 খবরে প্রকাশ গত ১১ই নভেম্বর সে, ক, নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকদস্যুদের একটি বিরাট দলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। সুদীর্ঘ সময় ধরে সেখানে গোলাগুলি বিনিময় হয়। শেষে, বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে মুক্তিযোদ্ধারা সরে পড়েন।

 উল্লেখ করা যেতে পারে এ যুদ্ধে আমাদের ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

 রণাঙ্গন সংবাদ: ১০ই ডিসেম্বর, ভালুকা। এখানে প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ মেজর আফসারের বাহিনী ৭ই ডিসেম্বর হতে ভালুকা থানা তিন দিক থেকে ঘেরাও করে শত্রুসৈন্যদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালাতে থাকে। শত্রুরা ৮ তারিখ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ওখান থেকে সামনে একটি মাত্র পথ খোলা থাকায় সেটি ধরে পালিয়ে যাওয়া শুরু করে। মুক্তিবাহিনীর ডিফেন্স তা টের পেয়ে শত্রদের পিছনে ধাওয়া করে। রাস্তায় গুলি বিনিময় হওয়ার ফলে ২৫/৩০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৫৫ জন রাজাকার ৫৫টি রাইফেল, ৪০০০ রাউণ্ড গুলি ও কিছু নগদ অর্থসহ আত্মসমর্পণ করে।

 উক্ত দুদিনের লড়াইয়ে মোট ৬০ জন রাজাকার নিহত ও প্রচুরসংখ্যক আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সামান্য আহত হন। এ অভিযানে যারা সক্রিয় অংশগ্রওহণ করেন তারা হলেন কমাণ্ডার আবুল কাশেম,;কমাণ্ডার ফয়েজ উদ্দিন, কমাণ্ডার খলিলুর রহমান, কমাণ্ডার চানমিয়া, সুবেদার মোসলেহ উদ্দিন ও আরও অনেকে।



-জাগ্রত বাংলা, ১১ই ডেসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট দখল: কুমিল্লা ও রংপুর অবরুদ্ধ

 যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টের পতন হইয়াছে। বাংলাদেশের শত্রর এই শক্ত দুর্গ আর অন্যতম বৃহৎ সেনাছাউনি এখন মুক্তিসেনা ও ভারতীয় সৈন্যের মিলিত বাহিনীর করায়ত্ত। গত ৭ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার বৈকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টে প্রবেশ করে। মিত্র বাহিনী ক্যাণ্টনমেণ্টের নিকটবর্তী হওয়ার পূর্বেই সকল পাকসেনা দুর্গ খালি করিয়া পলায়ন করে।

 যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টের পতনের সাথে সাথে পদ্মার পশ্চিমে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধাংশে শত্রুরক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাঙ্গিয়া পড়িল।

 মঙ্গলবার ভোরে ভারতীয় বাহিনী যশোর বিমান বন্দরের কাছে পৌঁছানোর সাথেই দখলদার পাক বাহিনী ক্যাণ্টনমেণ্ট ছাড়িয়া চম্পট দেয়। অসংখ্য বিবর ঘাঁটি পাকা বাঙ্কার আর কংক্রিটের প্রাকারে ঘেরা এই দুর্ভেদ্য দুর্গ ছাড়িয়া পাক বাহিনী পড়ি কি মরি খুলনার পথে পলায়ন করে।

 মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সরাসরি পশ্চিম দিক হইতে যশোর আক্রমণ না করিয়া নিপূণ রণকৌশলের আশ্রয় লইয়া উত্তর-পশ্চিমে চৌগাছা হইতে আকরি ও চূড়ামণকাঠি হইয়া উত্তর ও পূর্বদিক হইতে ক্যাণ্টনমেণ্ট ঘিরিয়া ফেলিলে পাক বাহিনী প্রতিরোধ না করিয়া এইভাবে দুর্গ ছাড়িয়ে দেয়।

 পলায়নের সময় পাক বাহিনী ক্যাণ্টনমেণ্টের বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, নিজেদের বিছানাপত্র, রেশন এমনকি কনট্রোল রুমের দেওয়ালজোড়া সামরিক মানচিত্রটিও অক্ষত অবস্থায় ফেলিয়া রাখিয়া যায়।