পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

442 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ऋददाल्लावञ्जनकालतलङिज्ञङज्ञानाच्ञङज्ञानाउाजानीतच् ৫ মে, ১৯৭১ পূর্ব বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি মওলানা ভাসানীর আবেদনদালাল, বিশ্বাসঘাতক ও মোনাফেক হইতে সাবধান হউন গত ২৩ বৎসর যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানী শোষকদিগের নিমর্ম শোষণ ও শাসনে পূর্ববাংলা আজ কঙ্কালসার হইয়া পড়িয়াছে। দীর্ঘকাল নিরবছিন্ন এই ধরনের হৃদয়হীন শোষণ, অবিচার ও অন্যাচার কি করিয়া কি করিয়া সম্ভব হইল? স্থানীয় পুঁজিদার ও সাহায্যকারী সাঙ্গাৎ না থাকিলে বাহিরের ডাকাত আসিয়া অজানাভাবে এমন নিপুণভাবে সহিত লুণ্ঠন করিতে পারে না। পশ্চিম পাকিস্তানী সামন্তবাদী প্ৰভু, পুঁজিপতি, স্বেচ্ছাচারী সামরিক দানব ও ষড়যন্ত্রকারী আমলাগণ পূর্ব পাকিস্তানে তাহদের জঘন্য শোষণের উচ্ছিষ্টভোগী একশ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক ও দালাল সৃষ্টি করিয়া পাকিস্তানের জনসংখ্যার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালীদিগের সর্বপ্রকার ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক অধিকার হইতে বঞ্চিত করিতে এবং তাহাদের উলঙ্গ শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখিতে সমর্থ হইয়াছে। মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দক্ষিণপন্থী দলগুলির পূর্ব পাকিস্তানী দালালেরা ধর্ম, সংহতি, ইসলাম বিপন্ন, কাশ্মীর গেল ইত্যাদির বাহানায় তাহদের পশ্চিম পাকিস্তানী প্রভুদিগের সহিত এক শ্লোগান তুলিয়া বাংলার বুকের উপর বসিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী শোষকদিগকে বাংলার বুকের রক্ত শুষিয়া লইতে সুযোগ করিয়া দিয়াছে এবং নিজেরাও কথাকিঞ্চিৎ উচ্ছিষ্ট পাইয়াছে। ১৯৫২, ১৯৫৪ ও ১৯৭০ সালে পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনসাধারণ এই দালালদিগকে বার বার উচ্ছেদ করিয়া দিলেও সমূলে বিনাশ করিতে পারে নাই। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দালালেরা সুচতুর চাতুরি দ্বারা বার বার পূর্ব বাংলার জনসাধাণের সর্বনাশ সাধন করিতে সফল হইয়াছে। এই সকল দালালরা পূর্ববাংলার জনতার রুদ্ররোষে জনতার হাতে মার খাইয়া আত্মগোপন করিয়াছে বা ভেক পাল্টাইয়াছে। সুযোগ বুঝিয়া বর্ণচোরারা স্বরূপ ধারণ করিয়াছে। বর্তমান পূর্ব বাংলার টেক্কা-এহিয়ার নরপশু সৈনিকদিগের ছত্ৰচ্ছায়ায় এই দালালেরা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়া বিভিন্ন টালবাহানায় পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের স্থায়ী শোষণদাসে পরিণত করিতে সুচতুর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছে। অথচ আপনারা অবগত আছেন এই মির্জাফরেরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর গণ ও অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গে নিজেদের চামড়া বাঁচাইবার জন্য পূর্ব বাংলার এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতি জোর গলায় সমর্থন জানাইয়াছিল। এখন যখন টেক্কা-এহিয়ার অভিশপ্ত দানবদিগের হাত পূর্ব বাংলার নারী শিশু বৃদ্ধ অসহায় নিরাপরাধ মানুষের তাজা খুনে রঞ্জিত, যখন পাকিস্তানের নকল হিটলাররা ব্যাপক গণহত্যা বাদেও পূর্ব বাংলার মানুষের ঘর-বাড়ি-স্কুল-কলেজ জ্বালাইয়া দিতেছে, এমন কি মসজিদ-মন্দির কলুষিত করিতেছে, নারীদিগকে ধর্ষণ ও তৎপর খুর করিতেছে তখন এই সকল মুখচেনা দালালেরা ধর্ম, ইসলাম, সংহতি ও ভারত বিরোধী প্রচারণা দ্বারা সংগ্রামকে বানচাল করিয়া দিতেছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী নরপিশাচদিগের তাবেদার বনিয়া তাহাদিগকে মদদ যোগাইয়া বাঙ্গালীদিগের স্থায়ী সর্বনাশ সাধন করিতেছে। ১৯৬৭ সালে আরব-ইহুদী যুদ্ধের পর ইহুদীরা দখলকৃত আরব এলাকা হইতে আরবী যেটুকু মূল্য আছে পাঞ্চাবী মুসলমানদের কাছে বাঙ্গালী মুসলমানদের জীবনের ততটুকু মূল্যও নাই। পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ব্যাপক গণহত্যা তাহা প্রমাণ করিয়াছে।