পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড গত মহাযুদ্ধের পর আমি ইউরোপ ভ্রমণে গিয়া পৃথিবীর কুখ্যাত অত্যাচারী ফ্যাসিষ্ট হিটলারের শক্তিমত্ততা ও তাহার অত্যাচারের বীভৎসতা দেখিয়া আৎকিয়া উঠিয়াছি এবং ভাবিয়াছি এই সমরদানব হিটলার এত ব্যাপক সৈন্য-সামন্ত অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র লইয়া কি করিয়া পরাজিত হইল? পরে তদন্ত করিয়া দেখিয়াছি-হিটলারের চরম বর্বরোচিত অত্যাচারে কোনক্রমে না ঘাবড়াইয়া ইউরোপের প্রতিটি দেশের সাধারণ মানুষের প্রশংসনীয় অপরূপ মনোবলই হইতেছে হিটলার-মুসোলিনীর মত অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয়ের মূলমন্ত্র। পাকিস্তানের ক্ষুদ্রে হিটলার-মুসোলিনী, এহিয়া-টেক্কার অত্যাচার-অবিচার-গণহত্যা হইতে বাঁচিবার আমাদিগের সর্বপ্রথম অস্ত্র হইতেছে সুদৃঢ় মনোবল। অত্যাচারী কোনদিনই স্থায়ী জয়লাভ করিতে পারে না। পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে এই শিক্ষাই দেয় যে সকল যুগের সকল বর্বর অত্যাচারীই ধ্বংস হইয়াছে আদর্শে বলীয়ান সুদৃঢ় মনোবলের অধিকারী জনগণের বিরোধিতায়। ফেরাউন, এজিদ, হালাকু খা, হিটলারমুসোলিনির মত অত্যাচারীর পতনই আমাদের সম্মুখে জলন্ত প্রমাণ তুলিয়া ধরে যে পূর্ব বাংলার অগণিত দেশবাসী সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে আমার আবেদন- কোন অবস্থাতেই গাবড়াইবেন না, মনোবল হারাইবেন না। অটুট মনোবলই সব অস্ত্রের বড় অস্ত্র। এমতাবস্থায় পূর্ব বাংলার কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে, ছাত্র, জনতা, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবি (১) আপনারা বিশ্বাসঘাতক এই সকল দালালদিগের কোন প্রচারণাতেই কান দিয়া নিজেদের মনোবল ও একতা নষ্ট করিবেন না। (২) পূর্ব বাংলার ৪ হাজার ইউনিয়নে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গড়িয়া তুলুন। (৩) প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং সেন্টার খুলুন। গেরিলা যুদ্ধের তালিম নিন। (৪) মুক্তিফৌজদিগকে সর্বতোভাবে সাহায্য করুন। (৫) জানমাল-ইজ্জত বাঁচাইবার জন্য যাহারা হিজরত করিতে বাধ্য হইতেছে দালালদের অত্যাচার হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করুন। (৬) চাউল ডাইল খড়ি নুন তৈল ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য অথবা রন্ধনকৃত খাদ্যদ্রব্য দিয়া মুক্তিফৌজদিগকে সাহায্য করুন। (৭) সকল শ্রেণীর যুবকেরা মুক্তিফৌজে যোগ দিন। (৮) দালাল ও শত্রর প্রতি কড়া নজর রাখুন। (৯) দালালদিগকে সামাজিক বয়কট করুন এবং তাহাদিগের জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন। (১০) সমরদানব এহিয়া-টেক্কার নির্মম অত্যাচারে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাইয়াছে অথচ জীবনের অন্তিম বাসনা অনুযায়ী কাফন-দাফন, জানাজা ও কবরের মাটি পায় নাই সে সকল হতভাগ্য মানুষের এবং গত ঘূর্ণিবাত্যায় যে লক্ষ লক্ষ মানুষের জানাজা ও কবর হয় নাই গ্রামে গ্রামে ও শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে (১১) গ্রামে গ্রামে আবালবৃদ্ধবণিতা শপথ গ্রহণ করুন- যত রক্ত দিতে হয় দিব কিন্তু শোষিত, নির্যাতিত, অবহেলিত পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করিয়া ছাড়ব। (১২) দলমত ভুলিয়া গিয়া সর্বদলীয় ঐক্যমোর্চা গড়িয়া তুলুন।