পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

288 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র দায়িত্ব আমাদের সকলের উপর রয়েছে। বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের দায়িত্ব আমার সরকারের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসী সবাইকে নিতে হবে। যে অটুট মনোবল ও অতুলনীয় বীরত্ব দিয়ে দেশকে আপনারা শত্রমুক্ত করে চলেছেন ইতিহাসে তা অনন্য ঘটনা হিসেবে স্থান পাবে। সেই মনোবল এবং উদ্যমকে এখন দেশ গঠনের কাছে নিয়োগ করতে হবে। একদিকে যেমন শেষ শত্রটি নিধন না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম করে যেতে হবে, অন্যদিকে তেমনি স্বর্ণপ্ৰসবিনী বাংলার হৃত সৌন্দর্য ও সম্পদের বাংলাদেশ সরকারের মৌলিক নীতি স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে আমার সরকারের মৌলিক নীতি ইতিপূর্বেই ঘোষণা করা হয়েছে । বাংলা গঠন করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষে মানুষে কোন প্রভেদ থাকবে না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, যে যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাঁদের ব্যক্তিগত আর সামাজিক জীবনে পরিপূর্ন ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্ৰীয় জীবনে গণতন্ত্রের মূল আদর্শের উপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের সুখী আর সমৃদ্ধিশালী বাংলা আমরা গড়ে তুলব। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হবে। প্রত্যেক নাগরিককে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে তাঁর রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্থায়িত্ব, স্বাধীনতা আর অগ্রগতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। বন্ধুরা আমার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য। যুদ্ধবিধ্বস্ত সোনার বাংলার শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য সরকার যে পদক্ষেপগুলি নেবেন, আপনারা এই পদক্ষেপে সরকারকে সাহায্য এবং সহযোগিতা করবেন। দেশবাসী ভাইদের কাছে আরও আবেদন করব, নিজের হাতে আপনারা আইনের ভার তুলে নিবেন না। আপনারা শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিজ নিজ এলাকায় নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করুন। মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা এবং আমার সরকারের নিয়োজিত কর্মচারীরা আপনাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সাহায্য করবে। বন্ধুরা আমার , তেইশ বছরের শোষণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে পশ্চিমা পুঁজিপতিরা। বাংলার সম্পদকে লুণ্ঠন করে তেইশ বছরে সোনার বাংলাকে শ্মশান করেছে। নৃশংস সেনাবাহিনী আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড, অনেক শিল্প-কারখানাকে ধ্বংস করে দিয়েছে । বিপর্যস্ত এ অর্থনীতিকে সম্বল করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আর মুক্তি আনার শপথ নিয়েছে। আমার সরকারের তরফ থেকে আমি বলিষ্ঠভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, একটি সমাজতান্ত্রিক অথ্যনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর সকল স্তরের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাবো। আমরা এমন একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্তা প্রবর্তন করব, যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দূর হবে- যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিটি কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত মানুষ তার জীবন ধারণের পরিপূর্ণ সুযোগ পাবে। সম্ভবপর হয় না যদি না দেশবাসীর পরিপূর্ণ সমর্থন পাওয়া যায়।