পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

332 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র দেশবাসীর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের | বাংলাদেশ সরকার প্রচার দপ্তর | ............ ՖՏԳ ծ অর্থ ও বানিজ্যমন্ত্রীর বেতার ভাষণ নতুন শপথ আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার মরণজয়ী সংগ্রাম ধাপে ধাপে এগিয়ে আজ এক চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব নতুন করে বুঝে নিতে হবে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ, প্রত্যেকটি নতুন ঘটনার প্রতি সজাগ দৃষ্টি, সচেতন মানসিকতা এবং সর্বোপরি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। বন্ধুগণ,নানারুপ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমাদের মুক্তিসংগ্রামে যে সাফল্য অর্জন করেছে তাতে বিশ্ববাসী বিস্মিত না হয়ে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মপ্রত্যয় এবং শৌর্যবীর্যে যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে যুগে যুগে পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষকে তা নূতন নূতন প্রেরণা জোগাবে। মানবতা ও ন্যায়নীতি বোধে উদ্বুদ্ধ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা একের পর এক শত্রঘাঁটি দখল করে চলেছে। মহান ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে আরো দুর্বার এবং বিশ্বের দরবারে আমাদের সম্মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে। ভারতের এই মানবতাবাদী এবং বন্ধুসুলভ ব্যাবহারে আমরা মুগ্ধ এবং কৃতজ্ঞ। আমাদের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটানও আমাদের বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র-স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ একটি বাস্তব সত্য। সমগ্র মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সেখানে আইন শৃঙ্খলা তবু বন্ধগণ, একথা সত্যি যে বর্বর হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বাত্মক ক্ষতি সাধনে এখনও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। হামলার প্রথম স্তরে তারা বাংলাদেশের অনেক শিল্প-কারখানা জুলিয়ে দিয়েছে কিংবা কলকজা করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করেছে। তার পর থেকে শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম জুলিয়ে দিয়ে, সোনা-দানা গরু-বাছুর লুটতরাজ করে, তাদেরকে নিজেদের বাড়ীঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ বাঙালীর জীবনে ডেকে এনেছে এক চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়। ক্ষেতে-খামারে বিষাক্ত ঔষধ ছিটিয়ে আমাদের ফসল করেছে বিনষ্ট। রাজাকার এবং চোর-ডাকাতদের লেলিয়ে দিয়ে, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বাড়ী জবরদখল করিয়ে তারা আমাদের সমাজে বপন করতে চেয়েছিল অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার বীজ। তারপর আমাদের শিক্ষিত এবং কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হত্যা করে মানবিক সম্পদকে করেছে পর্যুদস্তআমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির পথকে করেছে দুস্তর। আজ যখন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে মার খেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তখনও তারা চালাচ্ছে এই অবাধ ধ্বংসযজ্ঞ।