বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র
উঠেছে। কেননা বঙ্গ-লুণ্ঠন বন্ধ হয়ে গেলেই তার জঙ্গীশাহী বিকল হয়ে যাবে। তাই এই অর্থনৈতিক মারণাস্ত্র দিয়েই তাকে উৎখাত করতে হবে-বাঙ্গালীর উৎপাদন পশ্চিমার জন্য এবং পশ্চিমার উৎপাদন বাঙ্গালীর জন্য হারাম করে দিয়ে তাকে ভাতে-পানিতে মারতে হবে-পশ্চিম পাকিস্তানের চোরে চোরে লড়াই বাধিয়ে দিয়ে তাদের শয়তানির অস্তিত্ব চিরতরে ধ্বংস করে দিতে হবে।
সেই ভয়ে, এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ থেকে বাঙালীকে নিরস্ত্র করার জন্য পশ্চিমারা আবার এক জঘন্য ফাঁদ পেতেছে। অন্য সকল পৈশাচিকতার সাথে সাথে তাদের হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের খাদ্য-শস্য ধ্বংস করে দিচ্ছে।এবং তারই সাথে সাথে দুষ্কৃতকারী পঞ্চম বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে তারা বাংলাদেশে এক ভীষণ লুটতরাজ অরাজকতার আতঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেন একদিকে দুর্ভিক্ষ এবং আরেকদিকে অরাজকতার ত্রাসে বর্তমানের পরনির্ভরশীর বাঙ্গালী জনগণ আবার সাহায্য” এবং “আইন-শৃঙ্খলার”র জন্য পশ্চিমা প্রভুর আমলাতান্ত্রিক শাসনশোষণের জালেই আত্মসমর্পণ করে, যেন বাঙ্গালীর জন্য সকল চেষ্টা, মুক্তি- ফৌজের সকল অস্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়।
তাই, আজ আর কোনো আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে অসহায় হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আজ সর্বাঙ্গীণ জনযুদ্ধের সর্বপ্রথম পদক্ষেপে গ্রামে গ্রামে বাঙালীকে নিজের হাতে দুর্ভিক্ষ এবং অরাজকতা দমনের পথ ধরতে হবে। এজন্য গ্রামে গ্রামে আজাদী পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে হবে, এবং তার শাসন-সংস্থার মাধ্যমে সবদিকে সকল দুস্কৃতি-অরাজকতার বাহন হিসাবে শত্রর চরানুচরকে কঠিন শাস্তি দিয়ে দমন করে রাখতে হবে, অন্যদিকে শক্রকবলিত শহুরে অর্থনীতির মুখাপেক্ষী না হয়ে গ্রামে গ্রামে আপন শ্রমে আয়ত্তগত খাদ্য এবং কুটির শিল্পের উৎপাদন যতদূর সম্ভব বাড়িয়ে তুলতে হবে-যেন যত কষ্ট করেই হোক না কেন গ্রামে গ্রামে বাঙালী আপন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কৰ্মশৃঙ্খলার ভিত্তিতে এবং পঞ্চায়েতী শাসনের মাধ্যমে মোটা ভাত মোটা কাপড়ে জীবন যাপন করে সমাজ-শৃঙ্খলা বাঁচিয়ে রাখতে পারে, কোনোমতেই যেন শত্রর কাছে হাত পাততে না হয়।
হোক না তা সরল অথবা আদিম অর্থনীতি, তবুও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো পশ্চিমা শক্র ধ্বংসের জন্য বাঙালীকে সেই পথই ধরতে হবে। সেই গ্রামে গ্রামে আত্মনির্ভরশীল দুর্গের বজ্র- কঠিন ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে বাংগালী তার অর্থনৈতিক মারণাস্ত্র চালিয়ে যাবে, শত্রকে ভাতে-পানিতে পঙ্গু করে দেবে, এবং সেই দুর্গের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে শেষ মুহুর্তে মুক্তিসেনার সহযোগিতায় শত্রকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাংলার মাটি চিরতরে পূত পবিত্র করে তুলবে।
তারপর বাঙালী তার মুক্ত দেশে, আপন শ্রমে আপন জনকল্যাণের চির-নির্ভর জয়যাত্রা আরম্ভ করবে। গ্রামে গ্রামে আত্মনির্ভরশীল বাঙ্গালীর সম্মিলনে গড়ে উঠবে বৃহত্তর বাঙালী সমাজের বৃহত্তর অর্থনীতি, বলিষ্ঠ দুর্জয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, গ্রামের দৈনিক কাজে মিশে গিয়ে, গ্রামবাসীকে এই দুর্গ সংগঠন এবং উন্নয়নের কাজে সাহায্য করাই হল ভিত্তি-ফৌজের মূল নীতি এবং কার্যসূচী।
জয় মুজিব
জয় বাংলা