বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

498 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড ১৫ তারিখ আমরা ছাতক ঘিরে ফেলি। সেই দিন পাকবাহিনীর একটি গানবোট নদী পার হওয়ার চেষ্টা করলে রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে ডুবিয়ে দিই। সেখানে ত জন খান সেনা নিহত হয়। ১৬ই অক্টোবর দুপুরের দিকে আমাদের ডিফেন্স পাক বাহিনী ভীষণ শেলিং করে এবং সন্ধ্যার দিকে ‘বি’ কোম্পানীর পজিশনে হামলা করে ও তাদের জয়নগর টিলা দখল করে নেয়। এই দিন বিকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত আমার জন্য সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তিজনক সময় ছিল। কারন আয়্যারলেস সেট নষ্ট ছিল। সন্ধ্যায় প্রথমে শুনতে পাই পাক ফৌজ জিন্দাবাদ ও পরে শুনতে পাই ‘মুক্তি ফৌজ জিন্দাবাদ'। এ নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাই। তখন সঠিক সংবাদের জন্য ২ জনকে পাঠাই কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। শেষে রাত্রি সাড়ে ন’টার সময় মেজর আকবর আমার সিমেন্ট কারখানায় এসে সঠিক খবর দেন। জয়নগর টিলা পাকবাহিনী দখল করে নেবার পর বাধ্য হয়ে রাত্রি ১০ টায় আমার কোম্পানী ও ‘বি’ কোম্পানী নিয়ে সমস্ত রাত্রি বিলের মাঝ দিয়ে পানিতে হেঁটে টিলাগাও আসি। সেই সময় পাক বাহিনীর উপর হামলার প্রস্তত্ততি নেই। কিন্তু সেই সময় সেখানে পাকবাহিনী ছিলনা। পরে বলুয়া হয়ে বাঁশতলা ক্যাম্পে পৌছি। এই ৫ দিনের যুদ্ধে আমাদের ব্যাটালিয়নের হাতে পাক বাহিনীর প্রায় ৪০০ মত হতাহত হয়। আমাদের ৭ জন শহীদ ও বেশকিছুসংখ্যক আহত হয়। ছাতক অপারেশনের পর ৩ নং ব্যাটালিয়ন নিয়ে সিলেটের বিমান বন্দর আক্রমণ করার জন্য তামাবিল সীমান্তে ডিফেন্স নেই। সেখানে বেশ কয়েকটি অপারেশনের পর আমার কোম্পানী গোয়াইনঘাট থানা মুক্ত করে। ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখে আমার কোম্পানী নিয়ে সালুকটির বিমান বন্দরের অনতিদূরে পৌছে যাই। তখন আমাদের সাথে ভারতীয় আসাম রেজিমেন্টের একটি কোম্পানী ছিল। সালুকটির নদী এলাকা পর্যন্ত মুক্ত হওয়ার পর ১০ই ডিসেম্বর আমাকে ও আসাম রেজিমেন্টের উক্ত কোম্পানীকে মীর শওকত ছাতক ডেকে পাঠান আমাদের ব্যাটালিয়নরে ‘বি’ ও ‘সি’ কোম্পানীকে সাহায্য করার জন্য। ১১ তারিখে সুনামগঞ্জ-ছাতক রোড জংশনে আমাদের উক্ত দুই কোম্পানীর সাথে একত্রিত হই এবং সম্মিলিতভাবে পাকবাহিনীর উপর তীব্র আক্রমণ চালাই। পাকবাহিনী আমাদের হাতে মার খেয়ে সিলেট অভিমুখে রওনা হয়। ১৬ই ডিসেম্বর আমরা মালাগাছ ফেরির পশ্চিম পাড়ে ডিফেন্স লাগাই। সেদিন পাকবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পন করে। আমরা আমাদের ব্যাটালিয়নসহ সিলেটে পাক্কা ডিফেন্স করি। স্বাক্ষরঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন কুমিল্লা সেনানিবাস সাক্ষাৎকারঃ ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমদ こbr-b->ba○ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্নেল (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিমান ও নৌবাহিনীর মন্ত্রী) এম. এ. জি. ওসমানী বেনাপোল পরিদর্শন করতে আসেন। তিনি বেনাপোল পৌঁছে আমার সঙ্গে আলোচনা করেন এবং আমার ব্যাটালিয়ন পুনর্গঠিত করার কথা বলেন এবং ৬০০ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে বাছাই করে নিতে বলেন। তাঁর নির্দেশমত আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন যুব শিবির থেকে প্রায় ৬০০ জন তরুন মুক্তিযোদ্ধা ও ই-পি-আর বাছাই করে আমার ব্যাটালিয়নে নিয়ে নিই। উক্ত ই-পি-আর এবং তরুণদের বাছাই করার পর কর্ণেল ওসমানী আমাকে মেঘালয় প্রদেশের তেলঢালা নামক জায়গায় যেতে বলেন। আমি পুরা ব্যাটালিয়ান নিয়ে তেলঢালা চলে যাই। তেলঢালায় ১ম, ৩য় এবং ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের একত্রিত করা হয় এবং একটা ব্রিগেড গঠন করা হয়। ব্রিগেডের নাম ছিল জেড ফোর্স’। উক্ত ব্রিগেড ফোর্সের কমান্ডার হন মেজর জিয়াউর রহমান। এখানে ব্যাটালিয়নের নতুন রিক্রট করা সৈন্যদেরও ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়।