পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩১
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পশ্চিম বঙ্গ বিধান সভায় সর্বসম্মত প্রস্তাব: “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন” পশ্চিম বঙ্গ বিধান সভার কার্যবিবরণী ৮ মে, ১৯৭১

 Mr. Speaker: I now request Government Resolution the Chief Minister to move the Resolution and just after moving the Resolution I will request all honorable members to rise in their seats and remain standing in silence for two minutes in order to pay respects to the memory of martyrs of Bangladesh.

 শ্রী অজয়কুমার মুখার্জি: স্পীকার মহাশয়, আপনার অনুমতি নিয়ে আমি এই প্রস্তাবটা আনছি।

 বিগত ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগের অসামান্য ও ঐতিহাসিক সাফল্যের মধ্যে প্রকাশিত জনগণের সুস্পষ্ট রায়কে পদদলিত করিয়া বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র যে নারকীয় গণহত্যাভিযান চালাইতেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা তাকে তীব্র ধিক্কার জানাইতেছে এবং বাংলাদেশের জনগণ পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যে মরণপণ সশস্ত্র সংগ্রাম চালাইতেছেন তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সেই সঙ্গে সংগ্রামী জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাইতেছে।

 পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র যাহাতে অবিলম্বে এই বর্বর গণহত্যা বন্ধ করিতে এবং বাংলাদেশ হইতে তাহার সমস্ত সামরিক বাহিনী তুলিয়া লইতে বাধ্য হয় তাহার জন্য উপযুক্ত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই বিধানসভা ভারত সরকারসহ অন্যান্য দেশের সরকারের নিকট আবেদন করিতেছে।

 পশ্চিবঙ্গ বিধানসভা এই বিশ্বাস রাখে যে, তাহাদের সংগ্রাম যতই কঠোর ও প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হউক না কেন বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণ শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করিবেনই। এই সভা আরও আশা রাখে যে, যেহেতু এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম সর্বপ্রকার আধুনিক মারণাস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে এবং ইহা জাতীয় স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম, সেই হেতু ইহা শুধু ভারতীয় জনগণের নিকট হইতে নহে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এমন কি পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজ্যের জনগণের নিকট হইতেও ক্রমবর্ধমান সক্রিয় সমর্থন লাভ করিবে।

 বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রামের প্রতি ভারতের আশু ও জরুরী কর্তব্যের কথা বিবেচনা করিয়া এই বিধানসভা ভারত সরকারের নিকট দাবি জানাইতছে যে, অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও তাহার সরকারকে স্বীকৃতি এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় কার্যকারী সাহায্য দিতে হইবে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নরনারী যখন বুকের রক্ত দিতেছেন তখন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ইহার কমে কিছুতেই রাজী হইতে পারেন না।

 এই ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করিতে যতই দেরি হইতেছে ততই বাংলাদেশের জনগণের দুঃখ, দুর্গতি ও লাঞ্চনা বৃদ্ধি পাইতেছে। ইহাতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ও জনগণ গভীর উদ্বেগ বোধ করিতেছে। এই অবস্থায় যাহাতে অবিলম্বে উক্ত দাবিগুলি স্বীকৃতি হয় তাহার জন্য ভারত সরকারের উপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিধানসভা, পশ্চিমবঙ্গের জনগণ সরকারের নিকট আহ্বান জানাইতেছে।

 ব্যাপক নরহত্যার মুখে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সীমান্ত পার হইয়া পশ্চিম বাংলায় চলিয়া আসিতে বাধ্য হইতেছেন। সৌভ্রাতৃত্বের ও মানবতার অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে তাহাদের জন্যসবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা একান্ত দরকার। ইহা পশ্চিমবঙ্গের ও উহার পার্শ্ববর্তী সীমান্ত রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষমতার বাহিরে। এই কঠিন সত্য বিবেচনা করিয়া পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভারত সরকারের নিকট এই বিষয়ে যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের দাবি জানাইতেছে।