পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩৭

সন্দেহ নাই। আবর প্রশ্নটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুবোধবাবু যেমন বলেছেন মনে এক, মুখে আর এক রকম যেন না হয়। প্রস্তাব পাশ করে দিলাম বটে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যেন অন্যরকম না হয়। সেইজন্য বলছিলাম আপনাদের আনুষ্ঠানিক সমর্থন থাকলেও আমার কতকগুলি প্রশ্ন জেগেছে মনে। এটা কি সম্ভব যে, আমাদের দেশে আমরা অন্য দেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করছি, পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি তাঁদের স্বাধীনতার জন্য অথচ আমাদের দেশের গণতন্ত্রকে আমরা সমর্থন করি না, গণতন্ত্রকে যেখানে আমরা খতম করবার চেষ্টা করছি, গণতন্ত্রের উপর আমরা বারে বারে আক্রমণ করছি, তার নিয়ম-কানুন আইন কিছুই আমরা মানি না। আমাদের নিজেদের দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে সেখানে আমার মনে হয় এটা সম্ভব নয়। এর মধ্যে কোন আন্তরিকতা থাকতে পারে না। মার্ক্স বলেছিলেন, অন্য বিষয়ে বৃটিশদের বলেছিলেন, আয়ারল্যাণ্ডের উপর তোমরা আধিপত্য করছ- এ নেশন হুইচ অপ্রেসেস অ্যানাদার নেশন ক্যাননট বি ফ্রি। আমিও সেই কথা বলি অন্য দিক থেকে। যদি আমাদের দেশে গণতন্ত্র আমরা না মানি, তাঁরা মানবেন অন্য জায়গায়? আমরা মনে করি না এই সম্পর্কে তাদের কোন আন্তরিকতা থাকতে পারে।

 শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ঃ অন এ পয়েণ্ট অব অর্ডার, আমরা কি বর্তমান ইস্যু থেকে সরে যাচ্ছি না?

আমাদের দেশের সমালোচনা করবেন, না আজকের রেজলিউশনটা যা আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার সমালোচনা করে বক্তৃতা করবেন।

 মিঃ স্পীকারঃ পয়েণ্ট অব অর্ডার তুলতে গেলে এখানে যা বলা হয়েছে তাতে কোন রুল ইনফ্রিজ করা হয়েছে এইরকম যদি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই পয়েণ্ট অফ অর্ডার তুলবেন।

 শ্রী সুব্রত মুখার্জিঃ আমি বলছি আমাদের যা রেজলিউশন আছে এবং আপনি যে রেজলিউশনের উপর বক্তৃতা করবার অনুমতি দিয়েছেন, সেই রেজলিউশনের উপর বক্তৃতা করা হচ্ছে না, আমাদের দেশের গণতন্ত্র কতখানি, তার মাপকাঠিতে সমালোচনা করা হচ্ছে।

 মিঃ স্পীকারঃ যে প্রস্তাব এখানে এসছে, তাতে যিনি বক্তা, তিনি তাঁর আর্গুমেণ্ট ডেভেলপ করতে গিয়ে যেটা ভাল বুঝবেন সেই রকমভাবে ডেভেলপ করবেন, সেইভাবে আর্গুমেণ্ট পেশ করবেন। আপনার বলার সময় আপনিও তাই করবেন।

 শ্রী জ্যোতি বসুঃ ধরুন, এই পশ্চিম বাংলায়, কারণ এখানকার বিধানসভার কাছ থেকে আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করছি- এখানে কি হচ্ছে, এখানে যতটুকু গণতন্ত্র ছিল আজ তা শেষ হতে বসেছে। কারা শেষ করছে, কংগ্রেস দল, কংগ্রেস সরকার, এখানে অসংখ্য পুলিশ আছে, ৬০ হাজারের ওপর পুলিশ আছে। তার ওপর এক বছরে দেখেছি, যেখানে শ্রীমতি গান্ধীর রাজত্ব ছিল, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির শাসন- এই এক বছর ধরে দেখেছি, নির্বাচন পর্যন্ত যেখানে সি আর পি এসেছে, অসংখ্য হাজার হাজার সি আর পি আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারপর আমরা দেখলাম একটা অভাবনীয় জিনিস। সেই অভাবনীয় জিনিস আমরা দেখলাম যে, নির্বাচন যখন ঘোষণা করা হল, তারপর আবার মিলিটারি এল, ৬০ হাজার পুলিশে হবে না, হাজার হাজার সি আর পিতে হবে না,বাংলাদেশের পুলিশ দিয়ে হবে না, তার ওপর এল মিলিটারি। যেখানে একটা নির্বাচন হবে, সেখানে এল মিলিটারি এবং নানারকম জুলুম অত্যাচার তাদের দিয়ে করানো হল। কোথায় গণতন্ত্র? এ তো গণতন্ত্রের যেটুকু ছিল তাকে শেষ করবার ব্যবস্থা হচ্ছে। এবং শুধু তাই নয়, এখানে সাধারণ মানুষের উপর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর- গণতান্ত্রিক আন্দোলন যাঁরা সংগঠিত করেন মজুর, কৃষক, ছাত্র-যুবক, তাদের উপর নানাভাবে অকথ্য অত্যাচার গুণ্ডাবাহিনী তৈরি করে নকশালদের কাজে লাগিয়ে, অন্য সমাজবিরোধীদদের কাজে লাগিয়ে পুলিশের একটা প্রধান অংশ, সরকার সমস্ত মিলিয়ে, এই আক্রমণ, এই অত্যাচার তারা চালিয়েছে, এই জিনিস আমরা দেখেছি। গত এক বছরে দেখেছি আমাদের সাথী ২৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আজও শুনলাম