পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৩

বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবার একটা হাতিয়ার তুলে দেওয়া হবে। তা যেন আমরা না করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা সাহায্য কতদূর কি করেছি তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে, তবে তাঁদের সংগ্রামের কোন ক্ষতি যেন না করি। এ আবেদন আমি এই বিধানসভার মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে রাখতে চাই।

 মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আপনি জানেন যে, আরও কতগুলি প্রশ্ন এখানে উঠছে। আমরা বাংলাদেশের সংগ্রামে সাহায্য করতে চাই। আমরা কি চাই আমাদের প্রস্তাব তা আছে। বাংলাদেশে যে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং তার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত কিনা প্রশ্ন উঠেছে। আমি মনে করি ভারত সরকারের অবিলম্বে এই স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। কোন দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, কোন দেশ এই সংগ্রামকে কি বলেছে সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। ভারত সরকার কি করছেন সেটাই আমাদের বিচার্য বিষয় হওয়া দরকার। ভারত সরকার যদি স্বীকৃতি দিতে না চান বা গড়িমসি করেন তাহলে তার কাঠোর সমালোচনা করা উচিত এবং ভারত সরকার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা উচিত। আমি কংগ্রেস পক্ষের বন্ধুদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, এই প্রস্তাবে স্বীকার করা হয়েছে যে, ভারত সরকার ঠিকমত চলছেন না এবং আমরা প্রস্তাবে তার সমালোচনাও করেছি। এতদিন হয়ে গেল তবু কেন ভারত সরকার সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও তার সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না? এখানে কেউ কেউ চীনের সামালোচনা করেছেন। আমি মনে করি চীনের সমালোচনা করার বদলে ভারত সরকারের সমালোচনা করা উচিত। ভারত সরকার ভারতবাসীর কাছে দায়ী, ভারতবাসীকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। ভারতবাসীরা চায় বাংলাদেশের সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও তার সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। ভারত সরকার তা দিচ্ছেন না কেন? কি অন্তরায় আছে? ইণ্টারন্যাশনাল ল? আন্তর্জাতিক আইন? তাতে তো স্বীকৃতি দিতে বাধা নেই। ভূখণ্ড, জনসংখ্যা ও একটি সরকার হলেই আন্তর্জাতিক আইন একটি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারেন। এইসব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আছে। আন্তর্জাতিক আইনেও যখন আটকায় না তখন ভারত সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছেন না? কেন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য দিচ্ছেন না ভারত সরকার? বলা হচ্ছে যে, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য দিলে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়তে হতে পারে। কথাটাও ঠিক নয়। আপনাদের চোখের সামনে কি উদাহরণ নেই? স্পেনে যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল তখন সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানুষ স্পেন দেশের গণতান্ত্রিক মানুষকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য অস্ত্রশস্ত্র, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, ইণ্টারন্যাশনাল ব্রিগেড কি পাঠায়নি? ভারত সরকারেরও যদি সত্যিকারের ইচ্ছা থাকে সাহায্য করার তাহলে তারা পারেন না এই কাজ করতে? চীন কোরিয়ায় মার্কিন আক্রমণ ঠেকাতে সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাঠায়নি? ভারত সরকার যদি সত্যি সত্যিই সাহায্য করতে চাইতেন তাহলে তুলে দিতেন না দেশের মানুষের হাতে অস্ত্র? যে আর্মস অ্যাক্ট দিয়ে গোটা জাতিকে নিবীর্য পুঙ্গ করে রেখেছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা সেই অস্ত্র আইন চালু রেখে আজও জাতিকে পঙ্গু করে রাখা হচ্ছে না? সেই ঘৃণা আইন তুলে নিয়ে মানুষের হাতে অস্ত্র দিয়ে আওয়াজ তুলুন তোমরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করতে চলে যাও। দেখবেন হাজারে হাজারে স্বেচ্ছাসেবক যাবে। একেই বলে সক্রিয় সাহায্য করা। আমার মনে হচ্ছে ভারত সরকারের এ ব্যাপারে একটা কিন্তু আছে। এই কিন্তু অবিলম্বে দূর হওয়া দরকার যদি সত্যিকারের সাহায্য আমরা করতে চাই।

 কিছু কিছু সমালোচনা এসে পড়ে। সরকার পক্ষের সদস্যরা ইন্দিরা সরকারের প্রগতিশীলতার কথা বলছেন। ভাল কথা। কিন্তু আমাদের দল বিশ্বাস করে না যে, ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস বা সরকার প্রগতিশীল। আমাদের স্থির সিন্ধান্ত যে তিনি একটা প্রগতিশীলতার মুখোশের অন্তরালে থেকে ভারতবর্ষে ফ্যাসীবাদ কায়েম করার চেষ্টাই করেছেন। আমরা সমাজ বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এই সঠিক সিন্ধান্তে এসেছি। তার জন্য ভারত সরকারের ব্যবহারে নানা উল্টাপাল্টা জিনিস দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রতি মৌখিক সমর্থন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উল্টো ব্যবহার- তার একটা প্রমাণ। যে সরকার বাংলাদেশের জন্য এত চোখের জল ফেলেও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছেন না সেই সরকার কিন্তু সিংহলে অস্ত্র পাঠাতে বিলম্ব করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিকদের অস্ত্র দিতে পারেন না। এটা ভণ্ডামি নয়? ভিয়েতনামের মানুষ যেখানে স্বাধীনতার জন্য