পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৪৬

অনেক সন্দেহের কথা উঠছে। কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে যে প্রশ্নটা এখানে উত্থাপন করতে চাচ্ছি মাননীয় স্পীকার মহাশয় আপনার মাধ্যমে। আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা দেখতে পাচ্ছি তা সকলেই জানেন যে, ইয়াহিয়া খান মদদ কোথা থেকে পাচ্ছে, কোন কোন দেশ অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে। আজকে দেখতে পাচ্ছি যে, গ্রামদেশে ছোট ছোট ছেলেরা মুজিবের লাল সেলাম বলছে, জয় বাংলা লাল সেলাম বলছে। কিন্তু আজকে বিরোধী দলের নেতা যিনি এখানে উপস্থিত আছেন তাঁকে আমার স্ব-অনুরোধ জানাচ্ছি এবং তাঁকে দয়া করে বুঝতে বলছি যে, আজকে ইয়াহিয়া খান এই নিরপরাধ জনসাধারণকে অস্ত্রের দ্বারা গুলী করে হত্যা করছে তাকে লাল সেলাম কে জানাচ্ছে? জানাচ্ছে চীন। চীন আজকে মদদ জানাচ্ছে ইয়াহিয়া খানকে। তাই আমি বিরোধী পক্ষের নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি দয়া করে চীনের নেতৃস্তানীয় ব্যক্তিদের অনুরোধ করুন যাতে ইয়াহিয়া খানকে মদদ দেওয়াটা বন্ধ করেন। সর্বশেষে আমি এই প্রস্তাবকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী সুধীন কুমারঃ মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, যে প্রস্তাব মাননীয় সদস্য শ্রী অজয় মুখোপাধ্যায় আমাদের হাউসে পেশ করেছেন এবং সেটা আমাদের সদস্য শ্রী জ্যোতি বসু সমর্থন করেছেন সেই প্রস্তাব সম্পূর্ণ সমর্থন করে আমি কয়েকটি কথা আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই। আমাদের এই হাউসে অনেকে খুব উৎসাহের সঙ্গে বলেছেন যে, এত বড় গণসমর্থন ইতিপূর্বে খুব কম দেশেই দেখা গেছে সেখানে আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে এত ব্যাপক এবং এত ঐক্যবদ্ধ সমর্থন সেই আন্দোলনের পিছনে আছে। এখানে আরো অনেক তর্কের কথা উঠেছে। কিন্তু সেই তর্কের অবসান ঘটবে যদি আমরা এই আন্দোলনের ইতিহাসটুকু একটু দেখি। এই আন্দোলন হঠাৎ শুরু হয়নি। নির্বাচনের উৎসাহের কথা আমাদের প্রস্তাবে লেখা আছে। কিন্তু সেই নির্বাচনের আগে দীর্ঘ ২০ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস পূর্ব পাকিস্তান আছে। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিন থেকে যেদিন জিন্না সাহেব ঢাকায় গিয়ে ঘোষণা করলেন যে, পাকিস্তানে একটি মাত্র ভাষা হবে, সে ভাষা উর্দু ভাষা সেদিন থেকে পূর্ববাংলার গণআন্দোলন এটাকে স্বীকার করে নেয়নি। তারা বুঝেছিল যে, তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা চাপিয়ে দেবার প্রচেষ্টা পাকিস্তানের শাসক শ্রেণী করছেন এবং সেদিন থেকে আন্দোলনের নানা দিক প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ভাষার ব্যাপারে আমরা আন্দোলনের ইতিহাস দেখেছি। ১৯৫০ সালে যে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল, আমাদের এই হাউসে তার একজন অন্যতম নেতা উপস্থিত আছেন এবং তাদের আহব্বানে রাজশাহী জেলে যে গুলী চলেছিল সেই গুলী খাওয়া মানুষ এখনও আমাদের এই হাউসে উপস্থিত আছেন। গত হাউসে আর একজন ছিলেন যিনি ঐ আন্দোলনের নেতা ছিলেন। ১৯৫২ সালে সেই আন্দোলনে ১৩ জন ছাত্র এবং শ্রমিকদের মধ্যে কিঞ্চিৎ নিহত হয়েছিলেন। তারপরে ওরা প্রথম নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। সেই সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ভোটাধিকারের মধ্যে নির্বাচন হয়। কিন্তু নির্বাচন হলে কি হবে- যে সরকার তখন গঠিত হয়েছিল, সেই সরকার বুঝতেন যে, চলতে দেওয়া হবে না এবং সেই নির্বাচনে- যে মুসলিম লীগের কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, গণআন্দোলনের ফলে পূর্ববাংলার ইতিহাস থেকে তারা মুছে গেছে। সেদিন সেখানে জয়যুক্ত হয়েছিল একটি যুক্তফ্রণ্ট, যে যুক্তফ্রণ্টের মধ্যে সম্মানীয় ফজলুল হক সাহেব ছিলেন এবং আরো অন্যান্য নেতারা ছিলেন। এবং কৃষক শ্রমিক বাঁচার জন্য যে গভর্নমেণ্ট গঠন করেন তাকে চলতে দেওয়া হয়নি, সেই কুখ্যাত সেকসান ৯২ ব্যবহার করে তাকে বাতিল করে সেই গভর্নমেণ্টকে ভেঙ্গে দিয়ে ইসকিন্দার মির্জাকে পাঠিয়ে সেখানে স্বেচ্ছাচারী শাসন কায়েম করেছিল। তার পরবর্তী ইতিহাস হচ্ছে ১৯৫৬ সালে সাধারণ নির্বাচন- তারপর সমস্ত পাকিস্তানে এই প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়েছে এবং সেখানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। মুসলিম লীগের সে চেহারা ছিল না এবং আতাউর রহামান সেখানে চীফ মিনিস্টার হয়েছিলেন এবং ফজলুল হক সাহেব গভর্নর হয়েছিলেন। পরবর্তী ইতিহাস আপনাদের স্মরণে আছে যে কেমন করে সেখানে গভর্নমেণ্ট ভেঙ্গে দিয়ে ভাসানী সাহেব, আবদুল গফফর সাহেব তাঁদের জেলে পাঠানো হয় এবং কেমন করে সেখানে গভর্নমেণ্ট ভেঙ্গে দেওয়া হয়। তারপর ১৯৬২ সালে সেখানে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলেন কুখ্যাত এডুকেশন রিপোর্ট বাতিল করার জন্য এবং তখন থেকেই গণতন্ত্র ও স্বাধিকারের দাবীতে ঢাকার রাস্তায় অন্দোলন শুরু করেছিল। এবং তারই সেই প্রতিবাদের চেহারা দেখে আয়ুবশাহী সেখানে নতুন কনস্টিটিউশন-