পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৫১

সমর্থন করেছে আর এ তো একেবারে আমাদের পাশে, শুধু নয় আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে আছে, সুতরাং আমাদের সকলে মিলে এখানে এই চেষ্টাই করা দরকার যে, কি করে এটা সফল হয় এবং যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি সফল হয়। যত লক্ষ লক্ষ লোক সেখানে মরছে, প্রাণ দিচ্ছে, আরো হয়ত অনেক দিতে হবে কিন্তু যত বেশী তাকে সাহায্য করা সম্ভব, যত তাড়াতাড়ি তারা জিততে পারে সেটাই আমাদের সকলের কাম্য। আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন যে, ওখানে কোটি কোটি মানুষের অভ্যুত্থান তাকে সামরিক শাসকচক্র অস্ত্র দিয়ে দমন করছে, তবু সেখানে নিরস্ত্র মানুষ যেটুকু অস্ত্র পেয়েছে তা দিয়ে তারা বীরের মত লড়ছে, আমরা উদ্বিগ্ন এই জন্য যে, আমরা এত বড় রাষ্ট্র তার পাশে রয়েছি আমরা এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে স্বীকার করছি না কেন? আমরা এই সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনগণ যাতে জয়যুক্ত হতে পারে তার জন্য যথেষ্ট সাহায্য দিতে অগ্রসর হচ্ছি না কেন? আমি বলছি না যে কিছুই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। ভারত সরকার নানাভাবে সাহায্য সমর্থন জানিয়েছেন, সাহায্য হয়ত কিছু কিছু দিচ্ছেন কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন এই জন্য যে, যথেষ্ট সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। দিতে হবে এবং একথা ঠিক যে, শুধু চাল ডাল পাঠানোই নয়, ঔষুধ কিছু দরকার হতে পারে, কিন্তু প্রধান সাহায্য তারা চাচ্ছে অস্ত্র। যত লোক এসেছে, ফিরে গিয়েছে বা এখনও এখানে আছে, সকলের কাছ থেকে আমরা শুনছি যে আমাদের অস্ত্র দাও, বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দাও। এই সূত্রে আমি একটা কথা বলতে চাই, এই রকম লড়াই যখন হয় তখন বেছে মানুষ লড়ে না, তখন ব্যাপকভাবে মানুষ লড়তে চায় এবং তার সম্প্রদায় যাই হোক, তার রাজনৈতিক মতবাদ যাই হোক, সে যদি স্বাধীনতার জন্য লড়ে তাহলে তাকে লড়তে সাহায্য করতেই হবে। পূর্ব পাকিস্তানের, এখন বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি তারা প্রকাশ্যে আহব্বান জানিয়েছে ওখানকার স্বাধীনতার যুদ্ধে সমস্ত স্বাধীনতাকামী দলের মোর্চা গঠনের এবং সেখানে আমাদের এ কর্তব্য নয় যে, কার কি রাজনৈতিক মত সেই বেছে সাহায্য করা। সেখানকার মানুষ যারা লড়ছে, লড়তে চায় এবং লড়বার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাহায্য দিতে হবে। অবশ্য সেখানে গভর্নমেণ্ট আছে, গভর্নমেণ্টকে আমরা সাহায্য করবো, গভর্নমেণ্টকে স্বীকার করবো, তার মারফত সাহায্য দেবো তাতে কোন সান্দেহ নেই কিন্তু আমাদের গভর্নমেণ্টের তরফ থেকেও বলা উচিত যে, পাকিস্তানের দলমত নির্বিশেষে সমস্ত স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা যেন ঐক্যবন্ধভাবে লড়তে পারে, যাতে তাড়াতাড়ি জয়যুক্ত হতে পারে। একটি কথা উঠেছে যে, আমরা যদি স্বীকৃতি দিই তাহলে যুদ্ধ হবে কিনা, ঠিক কথা। পাকিস্তানের সামরিক শাসসচক্র তারা যে কোন প্ররোচনা দিতে পারে। একথাও ঠিক যে, পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রদের মধ্যে এক সোভিয়েট ইউনিয়ন তার রাষ্ট্রপতি পদগর্নি, তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবাদ করে হোক, দাবী জানিয়ে হোক, একটি চিঠি দিয়েছেন।

 পাকিস্তান-এর সামরিক চক্র হয়ত কোন কোন বৃহৎ রাষ্ট্রের সমর্থন বা পেতে পারে কিন্তু তাই থেকে ভয় দেখানো হচ্ছে যে, যুদ্ধ বেধে যাবে। যুদ্ধ বেধে যাওয়া অত সহজ কথা নয় আজকালকার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে কিন্তু আমি বলব যে, সেই আশংকাতে আমরা স্বীকৃতি দেব না, অস্ত্র দেব না এবং নিরস্ত্র মানুষকে এইভাবে হত্যা করে চলবে, আর সেখানে যারা বীর যোদ্ধা তাদের বুলেট নেই, তারা লড়বে, এই ভাবে কতদিন চলতে পারে? আমি মনে করিয়ে দেব যে, পাকিস্তানের সামরিক চক্র যদি কলকাতার উপর বোমা ফেলে তারা এ কথা বুঝেসুঝেই ফেলবে যে, ভারতেও ক্ষমতা আছে করাচী, লাহোরের উপর বোমা ফেলার কিন্তু আমি আপনাদের একটা কথা বলছি, আমাদের চেয়ে চেহারায় অনেক ছোট একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র ভিয়েতনামের স্বাধীনতার যুদ্ধকে সাহায্য করেছে অস্ত্রশস্ত্র সব কিছু দিয়ে, তার জন্য পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানে চেয়ে শত গুণে শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা অর্জন করেছে এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মবিধি লংঘন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট হানয়ের উপর ভিয়েতনামের রাজধানীর উপর দিনের পর দিন বোমাবর্ষণ করেছে। তার ফলে সেখানকার জনসাধারণ কি ভয় পেয়েছে, সেখানকার জনসাধারণ কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করেছে, সেখানকার গভর্নমেণ্ট কি পিছু হটে এসেছে-একটু নয়। ভিয়েতনাম আমাদের তুলনায় অনেক ছোট কিন্তু সেই ভিয়েতনাম যদি দক্ষিণ ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসের সঙ্গে সাহায্য করে থাকতে পারে তাহলে ভারতবর্ষ কেন পারে না? আমরা জানি কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পরিচালিত সেই রাষ্ট্র সেখানকার