পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬৪

যখন গ্রাস করল তখন তো একটি প্রতিবাদও ওঠেনি। পরোক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসাবে ভারতের কথা পশ্চিম বাংলার নিরাপত্তার জন্য এবং আর একটা শক্তির কাছ থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য এখানে মিলিটারির প্রয়োজন আছে। একথা কি ও’রা অস্বীকার করতে পারেন? টু রেক দি কনস্টিটিউশন ফ্রম উইদিন একথা ওরা একাধিক বার বললেন গণতন্ত্রের কথা কিন্তু আজকে সেইজন্যই মিলিটারি ও সি আর পি-র প্রয়োজন আছে।

(গোলমাল)

 আজকে দেখেছি ওদের রক্ষা করার জন্য সি আর পি বিপুল বাহিনীর প্রয়োজন হয়েছিল। বিরোধী দলের নেতাকে রক্ষা করার জন্য দু’হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে জানা গেছে। শেষ কথা, এই প্রস্তা সরকারের আন্তরিকতা আছে কিনা, বিরোধী দলের নেতা তা বার বার বলেছেন। আমরা মুখে এক, আর মনে আর এক কথা বলি না- আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী নই। আমাদের গোবিন্দ ভাই (এম এল এ) বার বার সে কথা বলার চেষ্টা এবং আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। মাননীয় নাম্বুদ্রিপাদ সাহেব মুসলিম লীগের পিছনে ছুটে নাগাল পাচ্ছে না, এ কথা আমরা এখানে বলতে চাই না। আমি বলতে চাচ্ছি মাননীয় জ্যোতিবাবুর দল ঐ হারুন অল রসিদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে হয়রান হয়ে গেলেন। এই আঙ্গুর কখন টক হল? তারপরে আমি ওকে জিঞ্জাসা করি গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা থাকে তাহলে কোন সাহসে কোন ধৃষ্ঠতায়, কোন কৌশলে বা কি মনে করে ২৭৭ জনের হাউসে ১২৩ জনকে নিয়ে সরকার গঠনের দাবী করেন? আর এম এল এ-দের পণ্যের মত কেনা বেচার সংকল্প করেন-মুসলিম লীগের এম এল এ-কে দলে টানার চেষ্টা করেনই বা কি করে? কাজেই স্যার, আমি এই কথাই বলতে চাই যে, এ সমালোচনা জ্যোতিবাবুর সাজে না। মাননীয় সভাপাল মহাশয়, কার্যকরী ব্যবস্থার কথা সুবোধবাবু বলেছেন। সেই একই সুরে আমি বলতে চাই যে পশ্চিম বাংলার এই অবস্থা কেন করলেন আপনারা? আজকে তাদের ট্রেনিং দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যেখানে ট্রেনিং দেওয়া হবে সেখানে জ্যোতিবাবুর দলের লোকরা শিখে এসে গুলিটা চালাবে জয়নালের বুকে, নইলে গোবিন্দর বুকে কিম্বা দেশের নিরীহ মানুষের বুকে। স্যার, এ নজীর আপনি কি পাননি? আমি তাই আজকে জ্যোতিবাবুকে জিঞ্জাসা করি কেন এই অবস্থার সৃষ্টি আপনারা করলেন? সীমান্তে যেকানে আমাদের ভাইবোনেরা পড়ে রয়েছে সেখানে ত্রাণের জন্য ছুটে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ যাবার সময় ভাবতে হচ্ছে ঐ দমদম দিয়ে যেতে হবে যেটা জ্যোতিবারুর এলাকা, সেখানে দিয়ে যাওয়া যাবে না। এখানে গেলেই পাইপ গানের গুলি বা অন্য কিছু লাগতে পারে। কাজেই এই যে আভ্যন্তরীণ অরাজকতার সৃষ্টি আপনারা করেছেন তার চরম মূল্য আমাদের এই সংকটের সময় দিতে হচ্ছে। তবুও বলি স্যার, শুভ বুদ্ধির উদ্রেক হোক। স্যার, এই প্রসঙ্গে ওদের বলি, এই যে হানাহানির শিক্ষা বা প্রচলন যাতে আপনারা মনে করছেন লাভবান হবেন, আজকে দিন এসেছে জ্যোতিবাবু খতিয়ে দেখুন লোকসানের হিসাবটা কি? তা না হলে আপনারা এদিকে ছিলেন আমরা ওদিকে ছিলুম, আজকে গণতন্ত্র সেটা প্রমাণ করেছে বলেই আপনারা ওদিকে গিয়েছেন, আমরা এদিকে এসেছি। এই হুঁশিয়ারী বা সতর্কতা দিয়ে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছি, গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে ভণ্ডামী চলে না তার বিচার করেছে জনসাধারণ। একটা জাতি আজকে যেখানে বিপদে বা সংকটে পড়েছে সেখানে সমস্ত কপটতা ভুলে গিয়ে সমস্ত ভণ্ডামীর ঊর্ধ্বে উঠে আসুন নিজেদের সংশোধন করে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। ইতিহাসের শিক্ষা আপনারা স্মরণ করুন। আজকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন যাতে ঐ সমস্ত ভাইবোনের সংগ্রাম জয়যুক্ত হয়। আপনার এগিয়ে আসুন, আমাদের তরফে কোন কপটতা নেই, আপনারাও আপনাদের কপটতা বর্জন করুন। আর তা করে বাংলাদেশের সংগ্রামকে জয়যুক্ত করুন, অনুরোধ জ্যোতিবাবু, এ থেকে আপনারা অতিরিক্ত মুনাফা লোটবার চেষ্টা করবেন না। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আমার শেষ কথা হ’ল,