পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬৯

কোথায়? এত তো সিংহালের কথা একজন সদস্য বলেছেন, আমি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, সিংহলে যুক্তফ্রণ্ট হয়েছিল শ্রীমতি বন্দনায়কের নেতৃত্বে। সেখানকার ট্রটস্কিপন্থী এবং বিপ্লবী সমস্ত দল যুক্তফ্রণ্ট তৈরী করে সরকার করলেন। যেদিন যুক্তফ্রণ্ট সরকার তৈরী হল সেদিন ময়দানে প্রথম বিজয় উৎসবের সমাবেশে ডাঃ কোটশা সিলভা, সেখানে ট্রটস্কি দলের নেতা, আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিপ্লবের নেতা তিনি বক্তৃতা দিয়ে বলেছিলেন তামিল উদ্ভব ভারতবাসীরা তোমরা এবার চলে যাও, আমাদের দেশের সিংহলের মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ওয়ার্কিং ক্লাস অফ দি ওয়ার্ল্ড ইউনাইট কোথায়? ভিয়েৎনামে একটা মাইলাই হয়েছিল, তাতে লক্ষ মানুষ মরেছে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদীদের সামনে। কিন্তু কোথায় আমেরিকার শ্রমিকশ্রেণী তার বিরুদ্ধে দাঁড়াল? নিউ লেফট লিবারেল যারা উদারণপন্থী তরুণ যুবকের দল, শিক্ষা, অধ্যাপক, সাধারণ মানুষ তারা তো আমেরিকার যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি? কই আমেরিকার কলকারখানায় শ্রমিকরা প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়নি যে, না, ভিয়েতনামের শ্রমিক কৃষক ছাত্র যুবক নারীর উপর নির্বিচারে আমেরিকার সেনাবাহিনী গুলী চালাচ্ছে, বোমাবর্ষন করছে, নেপাম বোমা ফেলেছে, আমরা এ মারণাস্ত্র তৈরী করব না। ওয়ার্কিং ক্লাস সলিডারিটি এ কথা তো লেনিন বলেছিলেন, কিন্তু ইতিহাসের সে জীবনতত্ত্বে আমি তো কোন মিল দেখছি না। চীনে যাঁরা সমাজতন্ত্রের কথা বলছেন তাঁরা আজকে ইয়াহিয়া খানকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। মাননীয় সদস্য হরেকৃষ্ণ কোঙার মহাশয়কে আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে বলছি, তাঁকে কোন আঘাত করব না, রাজনীতিতে আমার সঙ্গে তার মতের তুমুল পার্থক্য আছে ও থাকবে। তিনি কয়েকটা প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি একটা তুলনামূলক বক্তৃতা ভারত সরকারের সঙ্গে করেছন এবং সব সময় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের আন্দোলন সম্বন্ধে যদি স্পষ্টভাবে প্রচার ঠিক না হয়ে থাকে তাহলে বিদেশী রাষ্ট্ররা তার সুযোগ নিয়ে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যাবে। কিন্তু আমি তাকে দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, তিনি যে বক্তৃতা করলেন সেই বক্তৃতা যদি ঝাপিয়ে বিলি করা যায় তাহলে পাকিস্তান এমব্যাসি তার সবচেয়ে বেশি সুযোগ নেবেন। তাবে আশার কথা এই যে, আমাদের বিধানসভার প্রসিডিংস ছেপে যখন বেরুবে তখন ২-৩টা সরকার অদলবদল হয়ে যাবে, ২-৩টা বিধনসভা বসবে এবং সেটা যাবে না, এটা আশার কথা। আরও তিনি বলেছেন কেন মিলিটারি থাকবে। আজকে যে মুহূর্তে স্বীকৃতি দেয়া হবে সে মুহূর্তে প্রস্তুত থাকতে হবে যুদ্ধের জন্য, যে কথা মাননীয় সদস্য বিশ্বনাথ মুখার্জি তুলে ধরেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করছি তখন কি মাননীয় সদস্য হরেকৃষ্ণ কোঙার এবং অন্যান্য দলেরা বললেন যে, না চীন সমাজতান্ত্রিক দেশ? মনে রাখবেন ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে কি হুমকি দিয়েছিল। নানান কারণে পৃথিবীতে যুদ্ধ হয়েছে, হেলেন অকট্রয় নিয়েও যুদ্ধ হয়েছে। নারী নিয়ে যুদ্ধ হয়ে গেছে এক কালে। কিন্তু ভেড়া চুরির অভিযোগে একটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশ্বযুদ্ধের হুঙ্কার দিতে পারে সে এক চীন সাম্রাজ্য দেখিয়েছিল যে, ভারত চীনের ৯০০ ভেড়া চুরি করে নিয়ে গিয়ে ছিল। তার জন্য তারা ৯০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেন। আমাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন কারণ তাঁর শক্তি ছিল না। কিন্তু আজকে স্বীকৃতি দেওয়ার সাথে সাথে চীন রণহুঙ্কার দিলে প্রস্তুত থাকতে হবে, তখন কি বলবেন সোস্যালিস্ট কাণ্ট্রি ক্যান নট কমিট অ্যাগ্রেশন। সমাজতন্ত্রিক দেশ জীন আক্রমণ করতে পারে না। তখন কি আবার ভারতবর্ষ আক্রমণস্থলে আক্রমণকারী রাষ্ট্র এবং আক্রান্ত রাষ্ট্রের মার্ক্সিস্ট শ্রেণী চরিত্র নিয়ে বিচারে বসবেন? জিজ্ঞাসা করছি বলতে হবে আপনাকে। ভারতবর্ষ স্বীকৃতি দিক আমরা চাই, কিন্তু স্বীকৃতি দিলে তার পরিণতি স্বরূপ যদি বিশ্বযুদ্ধ আসে, যদি চীন বা যে কোন রাষ্ট্র ভারতবর্ষের উপর হামলা করে তাহলে আমরা সবাই কি তখন হাত মিলিয়ে সরকারের পিছনে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের জবাব দেব, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে বলব? বলুন না? তখন দেখবেন তখন আবার শ্রেণীতত্ত্বের আলোচনা এসে যাবে। আজকে যখন লড়াই আসবে তখন সৈন্য আসবেই। আমি, জ্যোতিবাবু, হরে কৃষ্ণবাবু ধুতি-পাঞ্জাবী পরে লড়ব না।

 (শ্রী হরেকৃষ্ণ কোঙারঃ দয়া করে আপনার সাথে আমার নাম জড়াবেন না। সি আই এ-র এজেণ্ট।) কে কার এজেণ্ট? একটা কথা মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ঐতিহাসিক উপন্যাস দেবদাস লিখবার পর বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্য সমালোচক, তিনি আজ পরলোকে। তিনি ঐ বইয়ের অত্যন্ত প্রশংসা শুনে সহ্য করতে না পেরে লিখলেন “হ্যাঁ শরৎবাবু গণিকালয়ের যে ছবি এঁকেছেন বড়ই নিখুঁত