পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭১

“মৃত্যুর অন্তরে পশি অমৃত না পাই যদি খুঁজে
সত্য যদি নাহি মেলে, দুঃখ সাথে যুঝে
পাপ যদি নাহি মরে আপনার প্রকাশ লজ্জায়,
অহঙ্কার নাহি মরে আপনার অসহ্য সজ্জায়।”

 মাননীয় ডেপুটি স্পীকার মহাশয়, এইরকমভাবে একটা অশালীন আচরণ যদি একটা দল করে তাহলে অন্যায় হয়। ——— (এ ভয়েসঃ প্রেস লিখছে।) প্রেস আমাদের লোক নয়। প্রেস আপনাদের ভয় করে, আমাদের ভয় করে না। আপনারা আনন্দবাজার ——— যুগান্তরের সাংবাদিকদের মেরেছেন, ভ্যান জ্বালিয়ে দিয়েছেন। ঐ আনন্দবাজারের লোকেদের সঙ্গে আপনাদের দলের নেতা জ্যোতিবাবু গ্র্যাণ্ড হোটেলে ভোজন করেছেন। ঐ আনন্দবাজার, হিন্দুস্থান স্ট্যাণ্ডার্ড, যুগান্তর ইত্যাদিরা ফলাও করে আপনাদের খবর বের করে। ——— (গোলমাল) “বীরের রক্তস্রোত, মাতার অশ্রুধারা; এর যত মূল্য সে কি করার ধূলায় হবে হারা” এত রক্তস্রোত কখনও ব্যার্থ হবে না। মুজিবরের নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলন জয়যুক্ত হবেই। ওঁরা কারুর প্রেরণা পান, না পান তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা প্রেরণা পেয়েছি, গোটা বিশ্ব প্রেরণা পেয়েছে। জয় হিন্দ।

 শ্রী অনিলকুমার মান্নাঃ মাননীয় ডেপুটি স্পীকার মহাশয়, আমি গণতান্ত্রিক কোয়ালিশন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের যে প্রস্তাব এনেছেন সেই প্রস্তাব অন্তরের সঙ্গে সমর্থন করছি। সেই সঙ্গে সমর্থন জানাই আজ বিরোধী পক্ষ ও সরকার পক্ষ একত্রিত হয়ে এই বিরাট মানুষের অধিকার অর্জনের যে অধিকার সেই অধিকারকে আজ উভয় পক্ষ মেনে নিয়েছেন এবং তাই তাঁদের জানাই আমাদের অন্তরের আন্তরিকতা। আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বিরোধী নেতা তাঁর বক্তব্যে একটা কথা বলে গেছেন যে, আজ এই প্রস্তাব শুধু প্রস্তাব থেকে যাবে না। এর ভেতরে আন্তরিকতা আছে- আমি এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে একমত। আমি বলতে চাই যে, আজ এক মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গীশাহী শাসনের বর্বর অত্যাচারে ওপার বাংলার হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ নরনারী তাদের জীবনের সমস্ত দিয়ে লুণ্ঠিত হচ্ছে, নিষ্পেষিত হচ্ছে। আজও তারা ঐ রকম জঙ্গীশাহী ট্যাঙ্ক, বুলেটের কাছে নিষ্পেষিত হচ্ছে, কিন্তু ঐ জঙ্গীশাহী শাসনের অবসান করতে পারেনি। কিন্তু আজও তারা পূর্ব বাংলার ওপারে মানুষের উপর নির্যাতন এবং পশ্চিম শাহী জংলী শাসনের অবসান করতে পারেনি। কিন্তু আজও তারা পূর্ব বাংলার ওপারে মানুষের উপর নির্যাতন এবং পশ্চিমশাহী জঙ্গলী শাসনের অবসান করতে পারেনি, তাদের সেই প্রস্তাব প্রস্তাবেই থেকে গেছে, তাদের মুখের কথা মুখের কথাই থেকে গেছে। তার সুরাহা করতে বা সেই জংলী শাসনের অবসানকল্পে কোনরকম একটা প্রস্তাব ভারত সরকার বা পৃথিবীর অন্য কোন রাষ্ট্র করেনি। যারা আজকে পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্র, যাদের কথায় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ উঠে বসে আজ তারা কোথায়, আজকে তারা নীরব কেন? আমি তাদের প্রশ্ন করি বাঙ্গালী জাতির প্রতি তাদের কি কোন কর্তব্য নেই? আজকে পূর্ব বাংলার এই যুদ্ধ কি ইতিহাসের যুদ্ধের মতই থেকে যাবে? একটা দেশ আর একটা দেশকে জোর করে দখল করছে, তাদের ভূখণ্ড হরণ করে নিয়েছে এই সমস্ত মানুষগুলির বাঁচার অধিকারকে পশ্চিমীশাহী জংলী শাসন বছরের পর বছর ধরে হরণ করে রেখেছে, সেই অধিকারকে অর্জন করার জন্য আজকের এই সংগ্রাম। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ভারত সরকার তাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আজকে আমি ইন্দিরা সরকারকে প্রশ্ন করব কেন তোমরা ওপারের বাঙ্গালীর বাঁচার অধিকার কে আজও স্বীকৃতি দিচ্ছ না। আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে কোন বাধা নেই, কারন পূর্ব বাংলা তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড এবং সেখানে ৯৯.৬ দশমিক গণতান্ত্রিক ভোটে জনগণ তাদের রায় দিয়েছে, সেখানে জাতীয় সভার সভ্যদের নির্বাচিত করেছে অথচ কেন তাহলে আজকে ভারত সরকার তাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না- এই প্রশ্ন আজকে প্রতিটি ভারতবাসীর, এই প্রশ্ন আজকে বাঙ্গালী জাতির, এই প্রশ্ন আজকে প্রতিটি শোষিত মানুষের। যখন আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিম বাংলার হাজার হাজার মানুষ দুবেলা খেতে পাচ্ছে না, যখন তারা তাদের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পূর্ব বাংলা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভারতের বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার এই সমস্যাকে আরও সমস্যাসঙ্কুল করে তুলছে। আজকে ইন্দিরা সরকার বোধহয় মনে করছে যদি আমরা পূর্ব বাংলাকে স্বীকৃতি দেই তাহলে আবার অন্য কোন রাষ্ট্র চীন, রাশিয়া বা আমেরিকা আমাদের আক্রমণ করবে বা