পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩০৮

বিমান বন্দরে

 দু’দিন আগে বিমান ধর্মঘট মিটেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নিরস্ত্র মানুষের উপর জঙ্গীশাহীর বর্বরতার প্রতিবাদে বৈমানিকরা আজ বিমান চালায়নি। আনন্দানুষ্ঠান সিনেমা, থিয়েটারগুলিও আজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

 বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্রকে অবিলম্বে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেবার দাবীতে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের উপর জঙ্গীশাহীর বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে আজ পশ্চিম বাংলায় এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন এবং ছাত্র সংগঠনগুলি।

 এদিন সকাল থেকেই দফায় দফায় যুবকরা ছাত্ররা শেখ মুজিবরের জয়ধ্বনি দিতে দিতে পাকিস্তান ডেপুটি কমিশন অফিসে এসে জঙ্গীশাহীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানান। একদল যুবক এবং ছাত্র বার ঘণ্টার জন্য অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন এই অফিসের সামনে।

 উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে সর্বত্র ঘুরেছি আজকের ধর্মঘট নিয়ে কোথাও কোন হামলার খবর পাইনি। বেলেঘাটা, শোভাবাজার, দমদম, জোড়াবাগান, বরানগর ইত্যাদি অশান্ত এলাকাগুলিও বাংলাদেশের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সমর্থনে এদিন শান্ত ছিল। পথের মোড়ে যুবকদের জটলা এ দৃশ্য মহানগরীর সর্বত্র।

 রাজপথগুলি খালি পেয়ে ফুটবল হকি এমনকি ডাঙ্গুলী খেলোয়াড়েরা তা দখল করে নেয়।

 দক্ষিণের কয়েকটি স্থানে দেখলাম শহীদ বেদীর সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। হাত দিয়ে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন-তার নীচে লেখা ‘এত তাজা প্রাণ বলি হচ্ছে, তবু দুর্গম যাত্রাপথে কোন বাধা মানব না।’ কোথাও কোথাও বাড়ীর শীর্ষেও অর্ধনমিত জাতীয় পাতাকার সঙ্গে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। সরকারী, আধাসরকারী বেসরকারী অফিসে, কল-কারখানায় সর্বত্র তালাবন্ধ।

যুব কংগ্রেসের অনশন

 স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাক সেনাবাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদে এণ্টালী যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে মিডল রোড ও সি আই টি মোড়ে এবং এনটালী মার্কেটের কাছে ১২ ঘণ্টার জন্য অনশন পালন করা হয়।

হাওড়ায় হরতাল

 হাওড়া শহর ও গ্রামাঞ্চলে আজ স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। ট্রাম, বাস, ট্রেন ও অন্য যানবাহন বন্ধ ছিল। বিনা পিকেটিং-এ হরতালের দিন হাওড়ায় কল-কারখানা বন্ধ হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। পাকিস্তান সৈন্য বাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদে শহরে ২৩টি বড় বড় মিছিল এবং উত্তর হাওড়া ও শিবপুরে শাসক কংগ্রেসের উদ্যোগে দুটি বড় জনসভা বাংলাদেশের মুক্তিফৌজকে অভিনন্দন জানায়।

সারা পশ্চিম বঙ্গে হরতাল

 আবেগ মথিত হৃদয়ে ও বাঙ্গলার মানুষের সঙ্গে এ-বাঙ্গলার মানুষ ধ্বনি তুলেছেন ‘শহীদের রক্ত তারা বৃথা যেতে দেবে না’।

 উত্তরে দার্জিলিং থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত গোটা পশ্চিম বাঙ্গলায় আজ সফল ধর্মঘট ও হরতাল পালিত হওয়ায় রাজ্যের রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা, ছাত্র-শিক্ষক-যুব এবং মহিলা সংগঠনগুলিও বুদ্ধিজীবী সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে আলাদা বিবৃতিতে এ বাঙ্গলার সংগ্রামী মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।