পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩১৫

 কিন্তু নতুন মর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের উপাসক বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ মৃত্যুঞ্জয় প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বীর রোশেনারা বেগম বুকে মাইন বেঁধে জল্লাদের ট্যাংকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের কিশোরী দেহের সংগে একটা আস্ত প্যাটন ট্যাংকেই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা ফৌজীদের হাত থেকে একের পর এক ঘাঁটি কেড়ে নিচ্ছে। গোটা বাংলাদেশ আজ একটিই অস্তিত্ব হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করছে। বাংলাদেশ জিতছে।

 পশ্চিম বংগের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী আমরা, রবীন্দ্রনাথের উত্তর পুরুষ আমরা, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে নীরব বা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আমরা ভুলিনি স্পেনের গৃহযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ এবং ভারতবর্ষের ভূমিকা। আমরা আমাদের মহান ঐতিহ্যকে কিছুতেই ভুলতে পারি না।

 তাই আমরা ‘বাংলাদেশ-সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি’ গঠন করছি।

 আমাদের নিজ নিজ ক্ষেত্র ও নিজ নিজ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমরা এক ভাবগত আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। আমরা চাই শুধু পশ্চিম বংগ নয়, শুধু ভারতবর্ষ নয়, গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক চেতনা ও মানবিক শুভবুদ্ধি বাংলাদেশের নবজাত সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সর্ববিধ সাহায্য নিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম শুরু করুক।

 সেই সঙ্গে আমরা বিপন্ন মানবতার পক্ষে বাস্তব ও প্রত্যক্ষ সাহায্যও সংগ্রহ করতে চাই। সীমন্তের ওপারে এই মুহূর্তে দরকার ঔষধ, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, গুঁড়ো দুধ ও বিস্কুট জাতীয় শুকনো খাদ্য। আর তা কেনার জন্য দরকার টাকা পয়সা।

 পশ্চিম বংগের মানুষ। রাজপথ, বস্তি, কুটির অথবা অট্টালিকা-যেখানেই আপনি বাস করুন, অবিলম্বে আপনার যতখানি সামর্থ্য তার থেকেও বেশি সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসুন। ১৪৪ লেলিন সরণি, কলকাতা-১৩ (টেলিফোন: ২৪-৩৯৩০)- এই ঠিকানায় সমিতির কার্যালয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপযুক্ত রসিদের বিনিময়ে আপনার সাহায্য ধন্যবাদের সংগে গৃহীত হবে।

 সীমান্তের ওপারে এই মুহূর্তে দরকার রক্ত। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রাজপথ, বৃতি, কুটির অথবা অট্টালিকা-যেখানেই আপনি বাস করুন অবিলম্বে ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে (৬৪ লেনিন সরণি, কলকাতা-১৩। সময়: বেলা ২টা থেকে ৬টা) গিয়ে রক্ত দান করুন। আপনার এই ভালবাসা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গৃহীত হবে।

 পশ্চিমবঙ্গের মানুষ-বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিন। সেই শিশুটিকে স্মরণ করুন-মায়ের বুকের রক্তের ফোয়ারায় যার মুখ গুঁজে ধরা হয়েছিল। ওর খাদ্য দরকার। সেই জননীকে স্মরণ করুন-পশুরা যার অংগচ্ছেদ ঘটিয়েছে। মা’র চিকিৎসার দরকার। সেই কিশোরটির কথা স্মরণ করুন-ফ্রণ্টে আহত যে বীর ক্যাম্পে শুড়ে আছে, দুই চোখে অধীর প্রত্যাশা নিয়ে যে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে, পশ্চিমবেঙ্গর দিকে। ওর রক্ত দরকার। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আপনি যেই হোন, যেখানেই থাকুন, একবার বিপন্ন বাংলাদেশের কথা ভাবুন। তার দরকার টাকা। কারণ ঔষুধ আর খাদ্য কিনতে হবে।

 আমাদের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হোক। আমাদের বিবেক শুভবুদ্ধির আহ্বানে সাড়া দিক। যেন ভুলে না যাই ইতিহাসের অগ্নি পরীক্ষায় আমাদেরও উত্তীর্ণ হতে হবে।