পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৩৪৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিবের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবেদন দৈনিক আনন্দ বাজার ৭ মে ১৯৭১

বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে বৌদ্ধ থানণ্টের কাছে বাঙালী বৌদ্ধদের তার

(বিশেষ প্রতিনিধি)

 ইয়াহিয়া ফৌজের কোপানল থেকে বাংলাদেশের ৫ লাখ বৌদ্ধও বাদ পড়েননি। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জুড়ে পাক ফৌজ বৌদ্ধ গ্রামগুলিতে ঢুকে নির্বিচারে হত্যা শুরু করে দিয়েছে।

 পাক হানাদারেরা অত্যাচার থেকে বাঙালী বৌদ্ধ শ্রমণ ও ভিক্ষুরাও নিস্কৃতি পাচ্ছেন না। কুমিল্লা পূর্ণানন্দ মহাস্থবির গুরুতর আহত। পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রসার সংঘের সভাপতি জ্যোতিপাল মহাস্থবির কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে বরইগাঁও বিহার থেকে পালিয়েছেন। চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি রোডের ধারে রাউজান থানার বৌদ্ধ গ্রাম বিলুজড়ির ওপর নেমে এসেছে মধ্যাহ্নের অন্ধকার। পাক ফৌজ সেখানে ঢুকে বারো হাত উঁচু দীর্ঘ মূর্তি চুড়মার করে ফেলেছ।

 চট্টগ্রাম মহাবিহারের অধ্যক্ষ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পাক ফৌজের অত্যাচারের ভয়ে কিছু বৌদ্ধ শস্ত্র নিয়ে চলে গেছেন দূরে এক গ্রামে।

 বাংলাদেশ থেকে বৌদ্ধরা আসছেন ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা হয়ে কয়েকশত পরিবার ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন। কলকাতায় বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর মহাসভার কিছু দুর্গত বৌদ্ধ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন।

 বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর মহাসভার মন্দিরে বসে কথা হচ্ছিল ধর্মাধার মহাস্থবিরের সঙ্গে। পীত বসন পরা এই প্রবীণ সন্নাসীর বাড়িও চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে মানুষের দুঃখে তিনি অভিভূত। সারা বাংলাদেশ জুড়ে বৌদ্ধ নির্যাতনের খবর দিয়ে তিনে বললেন, আমরা বাঙ্গালী বৌদ্ধ সম্প্রাদায়ের পক্ষ থেকে উথাণ্টকে একটি তারবার্তা পাঠিয়েছি। উথাণ্টকে নিজেও বৌদ্ধ। মানবতার এত বড় বিপর্যয়েও তিনি কি কিছু করবেন না?

 মহাস্থবির বললেন, শ্রমণদের ছেড়ে ভিক্ষুরা দেশ ত্যাগ করতে চাইছেন না। কুমিল্লার আলিশ্বরে পূর্ণানন্দ মহাস্থবিরের ওপর এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি আসেননি। তবে আবদুল্লাপুর ফটিকছড়ি থানা, চট্টগ্রাম জেলা থেকে দুইজন ভিক্ষু এসেছেন। এসেছেন, কুমিল্লার ধর্মরক্ষিত আর প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।

 কলকাতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন দিনাজপুরের সাব জজ শীলব্রত বড়ুয়া আর চট্টগ্রামের অধ্যাপক অরবিন্দ বড়ুয়া। এরা দুজনেই বৌদ্ধ।

 আর কয়েকটি পরিবারকে দেখলাম। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায় আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা হলো গহিরিয়া (চট্টগ্রাম) গ্রামের শ্রী মতি নিরূপমা বড়ুয়ার সঙ্গে। ১২ এপ্রিল ১১ টায় যখন পাক ফৌজ ওদের গ্রামে এল তখন ওরা পালিয়ে পাঁচ-ছয় মাইল দূরে এক বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নেন। তখন ওদের গ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলছে। তারপর দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রার শেষে রামগড় থেকে ফেনী পেরিয়ে সাবরুম। সেখান থেকে কলকাতা।