পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪১৭

না, হতে পারে না। অন্য কথায় বলতে গেলে বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপ দেবার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

না, হতে পারে না। অন্য কথায় বলতে গেলে বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপ দেবার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

 ভারতে ৭০ লক্ষ শরণার্থীর প্রবেশ অসুবিধা ও বিপদ নিশ্চয়ই দেখা দিয়েছে। তাতে এখানকার বুর্জোয়া সরকারের সুবিধা ও হয়েছে এ সমস্যার উপর সমস্ত গুরুত্বারোপ করতে এমন বুর্জোয়া রাজনীতিক আছেন যারা বলেন ইয়াহিয়া সরকার যদি বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দিনে ১ কোটি টাকা খরচ করে আমরা দৈনিক খরচ করছি ১ কোটি টাকা ৫০ লক্ষ শরনার্থীকে প্রাণে বাঁচাতে।

 এ অর্থ বাংলাদেশ এখন আর শুধু পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার নয়। এটা এখন ভারতের ঘরোয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরনার্থীদের ভরন-পোষন ও আশ্রয়ে ব্যবস্থা করতে আজ ভারতের বুর্জোয়া শাসকরা ন্যায়ত ধর্মত দায়ী ভারতের পার্লামেণ্ট সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস করেছিল বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি আন্দোলনের সমর্থনেও তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে।

 নয়াদিল্লী অবশ্য বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিশ্বের দবারে শরনার্থীদের জন্য সাহায্য ভিক্ষা করাই এর প্রধান কাজ। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা বিশেষ করে আমেরিকা বৃটেন যাদের পাকিস্তানের দুই অংশেই প্রচুর মূলধনের বিনিয়োগ আছে তাদের বিবেককে শান্ত করার জন্য শরণার্থীদের জন্য কিছু ওষুধপত্র পাঠাচ্ছে।

 এদিকে চীনের মাও আমলাতন্ত্র ইয়াহিয়া সরকারকে প্রকাশ্যে মদদ যোগাচ্ছে আর সোভিয়েট আমলাতন্ত্র তার দায় সেরেছে বাংলাদেশের জনগনকে মৌখিক সহানুভূতি জানিয়ে। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির যে প্রতিনিধিদল সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্বিংশতিতম সম্মেলনের জন্য মস্কো যায় সে দল গভীর আশাভঙ্গ নিয়ে ফিরে এসেছে। সোভিয়েট নেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে কোন ঔৎসুক্য এ দল দেখেনি। সোভিয়েট নেতারা শরণার্থী পুনর্বাসনের জন্য আমেরিকার সঙ্গ সহযোগিতা ছাড়া আর কিছু করতে প্রস্তুত নন বলে এ প্রতিনিধিদলের ধারণা।

 বিপ্লবের বিভিন্ন তাৎপর্য যতোই পরিষ্কার হচ্ছে ভারতের রাজনীতিকদের মতামত ততই পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এখন আর বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের সমর্থনে পূর্বের ঐকমত্যে নেই। বাংলাদেশের সংগ্রামের ভিতর এখন অনেক বিচ্ছেদ ও বিভেদের ভূত দেখছেন। তাদের শুধু একথা মনে করিয়ে দিলেই চলবে যে বিচ্ছেদ ও বিভেদ ইচ্ছা করলেই ঘটান যায় না আর তা ঘটবার হলে কিছুতেই ঠোকান যায় না। ইয়াহিয়া খানের হাতে কমপক্ষে ১০ লক্ষ লোকের প্রাণ গেছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ সংগ্রাম কাবু হয়নি। আবার সিপিএম শত চেষ্টা করলেও পশ্চিমবাংলায় বাংলাদেশের গণবিদ্রোহ সৃষ্টি করতে পারবে না।

 এখানে একথা অপ্রাসঙ্গিক নয় যে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ দেশে যে প্রথম যে স্বস্তিবোধ দেখা দিয়েছিল তা সবটাই ন্যায্য ও যুক্তিযুক্ত নয়। ধর্মীয় রাষ্ট্র পাকিস্তানের অবমাননায় অনেক ভারতবাসীই তাঁর উগ্র জাতীয়তাবাদের লাভ দেখেছেন। কিছু লোক হিন্দু সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের বিদ্রোহকে দেখেছেন। আর পুঁজিপতিরা ত তাদের উৎপন্ন মালের জন্য বাজারের প্রসার হবে এ স্বপ্নে মশগুল। বাংলাদেশের বিপ্লবের প্রকৃত অর্থ যতই পরিষ্কার হবে ততই প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলি এ সমস্যাকে সাম্প্রদায়িক মোচড় দেবে। বাংলাদেশে সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে পুঁজিপতিদের ভীষণ ভয়। এ বিপ্লবের ফল তাদের সপক্ষে হবে মারাত্মক।

 এ কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে বাইরের লোকের পক্ষে বাংলাদেশের বিপ্লবের রূপ ও তাৎপর্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া সম্ভব নয়।