পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪২৭
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বিহার রাজ্যে বাংলাদেশ সম্মেলন সমিতির জয়প্রকাশ নারায়ণের দাবীঃ অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া হোক ‘কম্পাস’ ১৭ জুলাই, ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বীকৃতি সম্পর্কে জয়প্রকাশ নারায়ণ

 সম্প্রতি ৬ই জুলাই পাটনায় বিহার রাজ্যে বাংলাদেশ সম্মেলন সমিতি কর্তৃক আয়োজিত এক জনসভায় দেশের সব রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্দেশ্যে সর্বোদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ এই মর্মে আবেদন করেন যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর বিশেষ চাপ দেবার ব্যবস্থা করেন। বংলাদেশ স্বীকৃতি পেলেই ঐ দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে উপযুক্ত পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র পেয়ে ইয়াহিয়া খানের হানাদারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা সহজ হয়ে উঠবে।

 শ্রী নারায়ণ এই অভিমত প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের সেনারা যে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে তার ফলে ভারতকে এক ভীষন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই সংকটের মধ্যে দিয়েই ভারতকে প্রকৃত পরীক্ষা দিতে হবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। এই সংকটের মাঝেই ভারত সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে অথবা তাকে ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়াতে হবে। আজ বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলছে তার বোঝা ভারতকে বহন করতেই হবে। বাংলাদেশ পরাজিত হলে, পরিণামে ভারতকেও পরাজয়বরণ করতে হবে। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের মুক্তকামী জনগণের সংগে ভারত সামিল হয়ে গেছে।

 শ্রী নারায়ণ বলেন যে, পাকিস্তানের ওপর অন্যান্য রাষ্ট্রদের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত অপেক্ষা করতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ যে রায় দিয়েছেন তার মর্যাদা ভারতকে দিতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশে যে নিপীড়ন ও অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তা থেকে সরে দাঁড়াবে না। আর তার নীতিরও পরিবর্তন ঘটাবে না। এমতাবস্থায় এক্ষুনিই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে হবে আর অস্ত্রশস্ত্রের যোগান দিতে হবে। ভারতের স্বার্থেই এ কাজটা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে যারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের আগমনের ফলে এদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা রকমের জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে পাকিস্তানের সামরিক চক্র যে টাকা খরচ করছেন, তার চাইতে তিন চারগুণ বেশী টাকা খরচ করতে হচ্ছে ভারতকে বিনা যুদ্ধেই। যদি কেউ মনে করেন যে যুদ্ধ চলতে থাকলে পাকিস্তানের কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে, তাহলে তিনি ভুল করবেন। পাকিস্তানের অর্থনীতি বানচাল হয়ে যাওয়ার জন্য আরও দুডিভিসন সৈন্য সংগ্রহ করছে।

 তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলছে, তাকে বাইরে থেকে মনে হবে গৃহযুদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এ যুদ্ধ গৃহযুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধকে সাম্রজ্যবাদী একটা জাতীর সংগে একটি মুক্তিকামী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জনগণের যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বার্তা বহন করে তিনি এটা উপলব্ধি করেছেন যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে বিদেশে পাকিস্তানী সামরিক চক্রের ভারতবিরোধী প্রচারকার্য্য ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তান বিদেশে এরকম একটা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যে পাকিস্তানে বাংলাদেশকে নিয়ে যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার মূলে আছে ভারত। অবশ্য পাকিস্তানের এরকম ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা