পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৬৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆԳ Տ বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড রাখতে পারবেন না। এ ব্যাপারে আমার আশঙ্কা রয়েছে। আমি চাই না, এই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে কোন প্রকার বিভেদ সৃষ্টি হোক বা মতদ্বৈধতা হোক। কিন্তু এ জন্য শুধু অন্যদের দোষারোপ করলে চলবে না। এ প্রশ্নে কেন বিলম্ব হচ্ছে সরকার তার কোন কারণ দেখাতে পারছেন না। এই বিলম্বের দরুন যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা দুনিয়া দেখছে, ভারতের প্রতিটি মানুষ দেখছেন। আমার পূর্ববর্তী বক্তাগণ একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, অন্ততঃপক্ষে স্বীকৃতিদানের আশ্বাস না দেয়ার দরুন উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিরন্তর বেড়ে চলছে। কোন ব্যক্তি এজন্য আশ্বস্ত হতে পারছেন না যে স্বীকৃতি দেয়ার পরও দেশে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা এইরূপ হতো। আমি বুঝতে পারছি না, যদি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাহায্য চাইতো তারা সাহায্য করতে তৎপর হতো তবু এই ৮৫ লক্ষ লোক যারা উদ্বাস্তুরূপে এসে পড়েছে তাদের সংখ্যা অনুরূপ হতো। সরকার এখনো বলেছেন, প্রতিদিন ৫০ হাজার লোক আসছে। পুনর্বাসন মন্ত্রীর বিবৃতি অনুযায়ী এই সংখ্যা কোটির কোঠা ছুইতে পারে এজন্য আমরা এ প্রশ্নে কোন মীমাংসায় আসতে চাইছি না, আমরা অপেক্ষা করছি আর উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের পদক্ষেপ না নেয়ায় এই সরল পরিণতি আমাদের দেশের ওপর পড়েছে। এটি এরূপ প্রত্যক্ষ যে, যে কেউ এটি দেখতে পারে। বহির্বিশ্বের মতের প্রশ্নে যতদুর বলা যায় আমরা তা অর্জনের চেষ্টা করছি। সরকারের ভাষ্য হচ্ছে , সারা বিশ্বে আমাদের প্রতিনিধি গেছে এবং বার বার এই উত্তর দেয়া হয়েছে যে, আমরা আশা করি তারা ভারতের বিষয়টিকে খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। তারা যদি বুঝতে আরম্ভ করেন তবে খুব ভাল কথা কিন্তু তারা বহির্বিশ্বে ও জাতিসংগে যে কাজ করেছে তাতে এ কথার পরিপুষ্টি হয় না, জাতিসংগে এ প্রশ্নে। জাতিসংঘের পক্ষ হতে ভারত ও পাকিস্তান পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য আলোচনা ও প্রস্তুতি চলছে। ভারতে পর্যবেক্ষক প্রেরণের বিষয়টি কিভাবে সৃষ্টি হলো। আমি বলছি, আমরা কখনই মেনে নেবো না। কিন্তু এ আলোচনা শুরু হলো কিভাবে? একদিকে আমরা উপলব্ধির কথা বলছি, একদিকে আমরা বলছি যে, বহির্বিশ্ব কর্তৃক এ সমস্যা উপলব্ধির পর আমাদের পক্ষে একটি --- সৃষ্টি হচ্ছে আর অন্যদিকে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক পাকিস্তানের সংগে সংগে ভারতে পাঠানোর কথা চলছে। এ হচ্ছে যে, বার ও পাকিস্তানের নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান বের করা উচিত। বিশ্বের যে সব রাষ্ট্র রাজনৈতিক সমাধানের কথা চলছে, আমি সরকারের কাছে জানতেচাই, কোন আন্তর্জাতিক শক্তি এ কথা স্পষ্ট করে বলেছে যে ইয়াহিয়া খানের প্রবাসী লোকদের সঙ্গে বসে রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সমাধান করার কথা বলে থাকতে এটি তার অন্তর্গত রয়েছে, এরূপ হলে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হোক এবং সরকার এটা পরিস্কারভাবে বলুন। আমি মনে করি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যে আলোচনা চলছে তাতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারতকে দুটি পক্ষ ভেবে আসছে। আমরা বাংলাদেশের প্রশ্নটি কিভাবে বুঝিয়েছি, আমরা কি বলতে গিয়েছি এ প্রশ্ন সাম্প্রতিক সফরের কি প্রভাব পড়েছে। এই সফরের ফলে অবশ্যই মানুষের মধ্যে উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে কিছুটা সহানুভূতি জেগেছে। তাদের জন্য ঔষধ ও খাদ্য এসেছে এবং বিশ্ববাসীর কাছ হতে আমরা কিছু সাহায্যও পেয়েছি। আর হয়ত এরূপ কিছু সাহায্য আমরা পাব কিংবা সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে কিছু বলা যায় না কিন্তু যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন বিদ্যমান সেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কথাবার্তা বিষয়টিকে কোনভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যার দরুন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। বাংলাদেশকে আমরা স্বীকৃতি দিলে পাকিস্তানের যুদ্ধ বাধাবার একটি কারণ সৃষ্টি হবে এই বিতর্ক বারবার উত্থাপন করা হয়। আমি বুঝি না পাকিস্তান আমাদের স্বীকৃতির প্রশ্ন নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য অপক্ষো করছে। পাকিস্তান পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছে বাংলাদেশের কোনও অংশ যদি এমন হয়ে যায়, যেখানে পাকিস্তানী সৈন্যের প্রবেশ অসম্ভব হয়ে পড়ে কিংবা কোন অংশ যদি স্বাধীন হয়ে যায় তবে তার দায় দায়িত্বও ভারতের । এই ভিত্তিতে পাকিস্তান যুদ্ধ যোঘণার অধিকারী হয়ে যাবে। এই ঘোষণা সে করে রেখেছে। সুতরাং আমরা যদি স্বীকৃতি না দেই তাহলে পাকিস্তান বুদ্ধ বাধাবে না আর যদি স্বীকৃতি দেই তাহলে যুদ্ধ বাধাবে এমন কোন কথা নেই। আমার জিজ্ঞাসা স্বীকৃতির ব্যাপারে এত বিলম্ব কেন? এটা কি এজন্য যে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী