পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৭১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆԵrԳ বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড আপনারা বলছেন, শরণার্থী সমস্যা আছে। শরণার্থী সমস্যার উদ্ভব হয়েছে ভারত সরকার স্বীকৃত না দেয়ার ফলে, কেননা, ২৫ মার্চের পর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আমি এখানকার লোকদের সংগে আলাপ করেছি- একজন শরণার্থীও আসেনি। ১৭ এপ্রিল মুজিবুর রহমানের সরকার মুজিবনগরে গঠিত হয়, সরকার গঠনের ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। আমি ভারত সরকারকে বল্লাম এখনও স্বীকৃতি দিন, আপনারা বলতেন, সরকার কোথায়, কিন্তু সরকার তো এখন গঠিত হয়েছে। ভারত সরকার কোন জবাব দেননি। মহোদয়, দুঃখের সাথে আমাকে স্যার চার্লস বেলস-এর মন্তব্য পুনরুল্লেখ করতে হচ্ছে। যা ১৯২৪ সালে তিনি চলেছিলেন। আমি আজ এ পরিষদের সম্মানিত সদস্যগণকে তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যাঁর কথা সরকার উপেক্ষা করছেন। তিনি বলেছিলেন, তিব্বত যদি চীনের কজায় চলে যায় তাহলে নেপাল, ভূটান ও সিকিম ভারত হতে মুখ ফিরিয়ে চীনের দিকে তাকাবে। আমি বলেত চাই, বাংলাদেশের মানুষ আজ ংসদে আমাদের সংগে আলোচনা করতে এসেছেন। আজ যদি বাংলাদেশকে ভারত স্বীকৃতি না দেন এবং বাংলাদেশ ভারত হতে বিমুখ হয় তাহলে নেপাল ভূটান কোথায় যাবে। নেপালের লোকেরা আমাদের সাথে লেখা পড়া করেছে। সেখানে যাঁরা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাঁরা সকলে আমাদের সহপাঠী ছিলেন। আন্দোলনে জেলে তাঁরা আমাদের সংগে ছিলেন। তাঁরা সকলে আমাকে বলেন, যখন তোমরা শক্তিশালী হবে, তখনই তো তোমাদের সংগে থাকব। তোমাদের শক্তি নেই, আমরা কোথায় কাদের সংগে থাকব তোমাদের সংগে থাকলে আমাদের স্বার্থরক্ষা কি করে হবে? আজ স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ ও সেখানকার অতএব আমি বিনা দ্বিধায় বলতে চাই বাংলাদেশের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তা সোজাসুজি। ভারতের ওপরই হয়েছে, ভারতে অকপটে বলা উচিত, এ আক্রমণ ভারতে ওপর হয়েছে। এত সাম্প্রদায়িতকতা কিভাবে মহোদয়, আমি আপনাকে বলতে চাই? স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতে সমস্ত সমাধান বের করেছে তাকে আর নষ্ট হতে দেয়া ঠিক নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের মুজিবুর রহমানের আওয়ামী পার্টিই সবচেয়ে বড় পার্টি এবং আমাদের স্বার্থের বড় রক্ষক। বাংলাদেশ মানুষ চীৎকার করে বলছে ধর্ম রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে না। হিন্দু ও মুসলিম একে অন্যের গলা কাটবে। ভ্ৰষ্ট ও দুষ্ট মস্তিস্কের হিন্দু হিন্দুর গলা কাটবে এবং মুসলমানেরা গলা কাটবে এক মায়ের পেট হতে জাত দুই সহোদর ভাই একে অন্যের গলা কাটে। বিভিন্ন মায়ের সন্তান পরস্পরকে বধ করে। এজন্য আমি পরিষদের মাধ্যমে ভারতে মুসলমানগনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এখানে যে সাড়ে ছয় কোটি মুসলমান আছে তাঁরা কি ইসলামে বিশ্বাস রাখেন না? ইয়াহিয়া খান সাহেব কি ইসলামে বিশ্বাস রাখেন না? মুজিবুর রহমান সাহেব ইসলাম সমর্থন করেন না? একজন মুসলিম মাতার সন্তানই ইয়াহিয়া খা আরেক মুসলিম মাতার সন্তান মুজিবের গলা কাটছে, ওখানে তারা বলছে, আমরা আমাদের মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যাদের ওপর বলাৎকার করছে, দিনে দুপুরে করছে, পথে ঘাটে বলাৎকার করছে, আমি জানতে চাই এরা কি ইসলাম শেখাচ্ছে? ইসলাম বিশ্বাসী। যারা আজ মুজিবের ওপর আওয়ামী লীগের ওপর, বাংলাদেশের মুসলমানদের ওপর ইয়াহিয়া কর্তৃক ছড়ানো এই গজবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে না তারা মুসলমান নয়। তাদের মুসলমান বলে দাবী করার অধিকার নেই। যদি মুসলমান থাকে তা হলে সাড়ে ছয় কোটি মুসলমানের ইজ্জত আজ বিপজ্জনক হুমকীর করি তারা আমাদেরই। সম্প্রদায়বাদের স্রোতের মধ্যে থেকে তারা স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করছে, স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করছে। এজন্য আমি বলব আল্লাহর ওয়াস্তে ঈশ্বরের কন্যা, মানবের জন্য মানবতার জন্য বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন।........