পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

480 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ব্যর্থ হয়েছে। প্রদেশের আবহাওয়া এবং ছোট ছোট কৃষি ফার্মের উপযোগী করে ধান ও পাট উৎপাদনের থেকেই অর্থ, বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। এর অর্থ হবে পশ্চিম পাকিস্তানের কার্যকরী করার ব্যয় হ্রাস এবং সেখানকার সামগ্রিক উন্নয়ন হার কমিয়ে ফেলা। এ না হলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি উপেক্ষার ফল বিপজ্জনক হবে”। (পৃঃ ৩১৬) কমিশনের গোড়ার কথা ১৯৬৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বিশ্বব্যাঙ্কের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট মিঃ জর্জ উডস গত বিশ বছরের উন্নয়ন সাহায্য, সাহায্যদান নীতির সাফল্য ত্রটি ও ফলাফল পর্যালোচনার জন্য অভিজ্ঞতা ও মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৬৮ সালের ১৯শে আগষ্ট তারিখে কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মিঃ এল,বি, পিয়ার্সন বিশ্ব-ব্যাঙ্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মিঃ রবার্ট এস, ম্যাকনামারার কাছ থেকে এই কমিশন গঠনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। মিঃ পিয়ার্সন এই কমিশনে কাজ করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে সাতজন সহযোগী গ্রহণ করেন। কমিশনের এই অপর সাতজন সদস্য হলেন, যুক্তরাজ্যের স্যার এডওয়ার্ড বয়েল, ব্রাজিলের মিঃ রবাটো দ্য অলিবিয়া ক্যাম্পোস, যুক্তরাষ্ট্রের মিঃ সি, ডগলাস ডিলন, পশ্চিম জার্মানীর ডঃ উলফ্রেড গুথ, জ্যামাইকার ডবু, আর্থার লুই, ফ্রান্সের ডৎ রবার্ট ই, মারজোলীন এবং জাপানের ডঃ সবুরো ওকিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মিঃ পিয়ার্সন এবং উপরোক্ত সাতজন সদস্য ছাড়াও অন্যান্য উন্নত ও উনানয়নশীল দেশ থেকে ১৪ জন বিশেষজ্ঞ গ্রহণ করা হয়। উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গত বিশ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা ছাড়াও আগামী ২০বছরের জন্য কমিশন নানা রকম প্রস্তাব ও সুপারিশ জ্ঞাপনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এদিক থেকে পিয়ার্সন কমিশনের গুরুত্ব বিশ্বের অকমু্যনিষ্ট দেশগুলোতে কম নয়। কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও আঞ্চলিক বৈঠক রাওয়ালপিন্ডি, নয়াদিল্লী, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি শহরে অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের ২৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে কমিশনের চেয়ারম্যান মিঃ পিয়ার্সন আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের রিপোর্ট বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্টের নিকট পেশ করেন। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণ অকমু্যনিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনার সঙ্গে পিয়ার্সন কমিশনের রিপোর্টে ভৌগোলিক দিক থেকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন পাকিস্তানের দু'অংশের অর্থনৈতিক সমস্যা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। কমিশন স্পষ্ট ভাষাতেই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। ফলে দ্রুত কৃষি উন্নয়নের ফলে পশ্চিম পাকিস্তান খাদ্যোৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্ধৃত্ত এলাকায় এবং পূর্ব পাকিস্তান ঘাটতি এলাকায় রুপান্তরিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক বৈষম্য দিন দিন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। কমিশন বলেছেন, “দেশের দু'অংশে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী নীতি আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষি উন্নয়ন কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রাকার ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ ঘটিয়াছে এবং খাদ্য ঘাটতির ভয় থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির দরুণ উদ্ধৃত্ত খাদ্যের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের কৃষিক্ষেত্রে স্থবিরতা এবং বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা ক্রমেই সকলের মোহভঙ্গের কারণ হয়েছে। • * * * * * * * * পাকিস্তানে শিল্প বিকাশ দ্রুত হওয়া সত্বেও এই শিল্প ক্ষুদ্রাকার এবং প্রায় অধিকাংশ কাঁচামালের অভাবে আমদানির উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তদুপরি প্রধানতঃ পশ্চিম পাকিস্তানকেই শিল্পায়ীত করা হয়েছে। দেশের দু'অঞ্চলের বৈষম্য তাতে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে”। (পৃ:৩১০)।