পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

614 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড গতকাল (রোববার) বিকালে রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ দলয়ি ১৫১ জন জাতীয় পরিষদ এবং ২৬৮ জন পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ সদস্য ৬-দফা ও ১১-দফা বাস্তবায়নের সংকল্প ঘোষণা করিয়া শপথ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সম্ভবতঃ পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ধরনের গণশপথ গ্রহণ এই প্রথম। শেখ মুজিবের ডানপার্শ্বে জাতীয় পরিষদ সদস্যগণ এবং বাম পার্শ্বে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ দাঁড়াইয়া শপথ গ্রহণ করেন। প্রত্যেকের বাম হাতে শপথনামা এবং ডান হাতে শপথের ভঙ্গীতে উদিত ছিল। নেতার সঙ্গে সঙ্গে সকল সদস্য শপথনামা পাঠ করেন। শপথ পাঠ করার পূর্বে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের সামনে জনসাধারণকে সাক্ষী শপথ গ্রহণ করিতেছেন। শপথ গ্রহণ সমাপ্ত হইলে বিশাল জনতা উল্লাসে ফাটিয়া পড়ে। “সহযোগিতা চাই, কিন্তু নীতির প্রশ্নে আপোস নাই” (স্টাফ রিপোর্টার) আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল (রবিবার) রেসকোর্সের বিশাল গনসমাবেশে ভাষণ দানকালে বলেন যে, শাসনতন্ত্র রচনার প্রশ্নে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের গণপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা গ্রহণে আগ্রহী, কিন্তু নীতির প্রশ্নে কোন আপোস করা হইবে না। তিনি বলেন, শাসনতন্ত্র ছয়-দফার ভিত্তিতেই হইবেকেউ ঠেকাইতে পারিবে না। শেখ সাহেব বলেন, আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। শুধু বাংলারই নই, আমরা সারা পাকিস্তানেরই ‘মেজরিটি। আমরা যে শাসনতন্ত্র রচনা করিব, সেটাই জনগণ গ্রহণ করিবে এবং উহা বানচালের অধিকার কাহারও নাই। তিনি বলেন, মরহুম নেতা শহীদ সোহরাওয়াদী বলিয়াছেন, শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণের রায়ই শেষ কথা, আর সে রায় আমরা পাইয়াছি। শেখ মুজিব বলেন, তবু সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়াই আমি একথা বলবো না যে, শাসনতন্ত্র রচনার প্রশ্নে আমরা সহযোগিতা চাই না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রিতু বা ক্ষমতার জন্য নয়, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম বাংলার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের গরীব জনগণের দাবী আদায়ের জন্য। তাই শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে আমি পশ্চিম পাকিস্তানের গণপ্রতিনিধিদেরও সহযোগিতা চাই। শেখ মুজিব সরকার প্রণীত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাক্সবন্দী করিয়া রাখার জন্য সরকারের নিকট আহবান জানাইয়াছেন। সন্ত্রাসবাদীদের সম্পর্কে দেশের সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়া শেখ মুজিব গণতান্ত্রিক বিজয়কে সুসংহত করার স্বার্থে সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের দালালদের বাড়াবাড়ি দমনের জন্য দেশবাসীকে সদা প্রস্ত্তত থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, মহল্লায় আওয়ামী লীগ গঠন করুন এবং রাতের অন্ধকারে যারা ছোরা মারে তাদের খতম করার জন্য প্রস্তত্তত হোন। রাতের অন্ধকারে যারা মানুষ হত্যা করে, সেই সব বিপ্লবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চোরের মত রাতের অন্ধকারে মানুষ হত্যা করিয়া বিপ্লব হয় না। বিপ্লব চোরের কাজ নয়। সন্ত্রাসবাদী ও সন্ত্রাসবাদের দালালদের খতম করার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে বাঁশের এবং সুন্দরী কাঠের লাটি বানাইবার পরামর্শ দিয়া শেখ সাহেব বলেন, প্রত্যেকের হাতে আমি হয় বাঁশের নয় সুন্দরীকাঠের লাটি দেখিতে চাই। কিন্তু খবরদার আমার হুকুম ছাড়া সেগুলি ব্যবহার করবেন না।