পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

654 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড ব্যাপারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চলিবে না, তবে যে কোনরূপ সাম্প্রদায়িকতা প্রচার বেআইনী করিতে হইবে। রাষ্ট্র হইবে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ৪। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নিজ বিবেক অনুযায়ী দল, সংঘ-সংগঠন গঠনের অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি মৌলিক নাগরিক অধিকারের পূর্ণ গ্যারান্টি থাকিতে হইবে। ছাত্র শিক্ষক প্রভৃতি সকলের রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের অধিকার দিতে হইবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সার্বভৌমত্বের উপর সরকারী হস্তক্ষেপ না করার গ্যারান্টি থাকিতে হইবে। মেহনতি কৃষক, মজুর, কর্মচারী প্রভৃতি জনগণের রুটি রুজির প্রভৃতি সংগ্রামে রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ রাখিতে হইবে এবং সরকার যাহাতে মেহনতি শোষিত মানুষের ন্যায্য দাবী আদায়ে ভূমিকা গ্রহণে বাধ্য হয় উহার গ্যারান্টি থাকিতে হইবে। শ্রমিক অন্যান্য বেকারদের ভাতা, নূ্যনতম চিকিৎসা পাইবার অধিকার প্রভৃতি মৌলিক অধিকারসমূহের গ্যারান্টি দেওয়া। ৫। পাকিস্তানে যে মূল পাঁচটি ভাষাভাষী জাতির অবস্থান উহাদের সকলকে পাকিস্তান ফেডরেশন হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বতন্ত্র স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকার দিতে হইবে। জাতিসমূহের এইরূপ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতির ভিত্তিতে জাতিসমূহের স্বেচ্ছাকৃতভাবে অর্পিত বা হস্তান্তরিত ক্ষমতা কার্যকরী করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ফেডারেশন সরকার গঠন করা চলিবে। ৬। উল্লিখিত নীতির ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ফেডারেল সরকারের হাতে উর্ধ্বপক্ষে এগার দফা কর্মসূচী মোতাবেক দেশরক্ষা, বৈদেশিক নীতি (বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যতীত) ও মুদ্রা (ছাপান) -এই তিনটি বিষয় ন্যস্ত থাকিতে পারে। অবশিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে এগার দফা মোতাবেক সকল জাতী-গোষ্ঠীর নিজস্ব সরকারের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা বা স্বায়ত্তশাসন প্রদান করিতে হইবে। ৭। বৃহৎ অথবা শক্তিশালী জাতি যেন ক্ষুদ্র অথবা দুর্বল জাতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত তাহার উপর চাপাইতে না পারে উহার গ্যারান্টি থাকিতে হইবে। কেন্দ্রীয় সরকার যেন জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতে না পারে-উহার গ্যারান্টি থাকিতে হইবে। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের নীতি চালু করিতে হইবে এবং বাংলা ও উর্দু দুইটি রাষ্ট্রভাষাকে অবিলম্বে চালু করা ও পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি জাতির চারটি ঘোষণা করিতে হইবে। ৮। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, শিল্প, ব্যাঙ্ক, বীমা বা বিদেশী শোষক সমাজবাদী পুঁজি জাতীয়করণের পথে বাধা হইতে পারে এমন কোন আইন শাসনতন্ত্রে রাখা চলিবে না। কৃষকের স্বার্থে ভূমি সংস্কারের অন্তরায় সৃষ্টিকারী কোন আইন শাসনতন্ত্রে রাখা চলিবে না। ৯। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক যন্ত্র কাঠামো নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সরাসরি কর্মচারী বাছাই ও নিয়োগের ব্যবস্থা রহিত করিয়া প্রদেশ হইতে কর্মচারী গ্রহণের ব্যবস্থা শাসনতান্ত্রিক আইন হিসাবে প্রণয়ন করিতে হইবে। কেন্দ্রীয় বিচারালয় বা সুপ্রীম কোর্টও অনুরূপভাবে গঠন করিতে হইবে। কেন্দ্রীয় সুপ্রীম কোর্টে একজন মাত্র নির্ধারিত বিচারপতি না করিয়া পাঁচটি জাতির পাঁচজন বিচারপতি হইতে রোটেশন ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিতে হইবে। এই সকল ক্ষেত্রে প্রাদেশিক পরিষদ হইবে নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রের উধ্বতন স্থায়ী পদসমূহের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ও বিচারপতি প্রভৃতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে। ১০। বিচার বিভাগ হইবে শাসন বিভাগ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বাধীন।