পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

701 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের জন্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৭ মার্চ, ১৯৭১ ১৭ দফা প্রস্তাব (মোজাফফর) গনতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করুন : বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নেই আজ দেশবাসীকে মনে রাখিতে হইবে যে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী খুশী হইয়া নির্বাচনে রাজী হয় নাই- আন্দোলনের চাপে পড়িয়াই নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে বাধ্য হইয়াছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে, জাতীয় পরিষদ ডাকা হইয়াছে। কিন্তু এখনও গনতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচনা ও জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বাধা সৃষ্টি করিবার জন্য শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহ নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করিতেছে। সম্প্রতি এই ষড়যন্ত্র আত্মপ্রকাশ করিয়াছে বিভিন্নভাবে- জনাব ভূট্টো জাতীয় পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে যোগদান করিবেন না বলিয়া বিবৃতি দিয়া ঐ ষড়যন্ত্রকে পাকাপোক্ত করিতেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মাথাচাড়া দিয়া উঠতে সাহায্য করিতেছে। পাক-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটাইয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা, বিভিন্ন জাতির অধিকার , কৃষক-শ্রমিক প্রভৃতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতি জনতার অধিকার নস্যাৎ করিবার যে ষড়যন্ত্ৰ চলিতেছে উহাতে জনাব ভুট্টো অংশীদার হইয়াছেন। এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ থাকিবার এবং উহাকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখিয়া দাঁড়াইবার জন্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি উদাত্ত আহবান জানাইতেছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) মনে করে যে, পাকিস্তানে প্রথম সাধারন নির্বাচনের ভিতর দিয়া জনগণের যে রায় প্রকাশ পাইয়াছে তাহাকে মানিয়া নিয়া পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র নিম্নলিখিত নীতির ভিত্তিতে রচিত হওয়া উচিতঃ (1) পাকিস্তান রাষ্ট্রে ৫টি ভাষাভাষী জাতি- বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধী ও বেলুচ বাস করে। পাকিস্তান দুইটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল লইয়া গঠিত। এই বাস্তব সত্য মানিয়া নিয়া শাসনতন্ত্র প্রত্যেকটি জাতির সমান অধিকার ও প্রত্যেকটি জাতির বিচ্ছিন্ন হইবার অধিকারসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতিগতভাবে স্বীকৃত হইতে হইবে। শাসনতন্ত্রে এই নীতি স্বীকৃত হইলে পাকিস্তানের প্রত্যেকটি জাতির অধিকারগুলি নিশ্চিত হইবে, বিভিন্ন জাতির ভিতর বিদ্বেষ, সংশয়, ভয়-নীতি ও ভূল বুঝাবুঝি দূর হইবে, তাহদের ভিতর প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব গড়িয়া উঠিবে। (2) শাসনতন্ত্রে এই নীতি স্বীকার করিয়া নিয়া বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ( ১১ দফা কর্মসূচীর ২ ও ৩নং ধারা বা ন্যাপের কর্মসূচী মোতাবেক) দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র (রাজনৈতিক) ও মুদ্রা-এই তিনটি বিষয় ন্যস্ত হইবে। বাদবাকী সমস্ত বিষয় (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসহ) পাঁচটি (3) কেন্দ্রীয় আইনসভা হইবে এক কক্ষবিশিষ্ট। আইন সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের সুযোগে বিশেষ একটি প্রদেশের উপর ইহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাহাতে কোন কিছু চাপাইয়া না দেওয়া হয়, তাহার জন্য শাসনতন্ত্রে একটি বিশেষ রক্ষা ব্যবস্থা রাখিতে হইবে।