পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: নবম খণ্ড
১৪৬

নায়েক সিরাজ প্লার্টুন উইথড্র করে। পাকসেনারা এখানে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একজন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ যুদ্ধে হাবিলদার নুরুল আমীন ও অপর একজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতরভাবে আহত হয়। নায়েক সিরাজ অসীম সাহস ও বিরত্বের সাথে এ যুদ্ধ পরিচালনা করে।

 ৬ই মে-ফেনাকাটা পুলে সংঘর্ষঃ চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ রাস্তায় পাকবাহিনীর চলাচল শুরু হয়। কিন্তু এ্যামবুশ করার সুযোগ পাইনা। অবশেষে ৬ই মে নায়েক সফির সেকশন নিয়ে এ্যামবুশ পার্টি বসাই। বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনখানা পাকসৈন্য বোঝাই ট্রাক চন্দ্রগঞ্জ থেকে চৌমুহনীর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে আমরা অতর্কিত আক্রমণ চালাই। আমাদের এই অতর্কিত আক্রমণে পাক জোয়ানরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তাদের প্রস্ততি নেয়ার পূর্বেই বেশ কয়েকজন খানসেনা ধরাশায়ী হয়। মুহূর্তের মধ্যে তারা ভারী মেশিনগান দ্বারা আমাদেরকে পাল্টা আক্রমন করে। পাকসেনাদের মেশিনগানের গুলীতে একই নামে আমাদের দু'জন বীর মুক্তিসেনা (ইসমাইল) শহীদ হন। তাদের একজনের বাড়ি আমিশাপাড়া বাজারের পশ্চিমে সাতঘরিয়া, অপরজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জে। এরপর আমি আমার সৈন্য তুলে নিয়ে শহীদদ্বয়ের দাফনের ব্যবস্থা করি-আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কর্মী চৌমুহনীর হোটেল জায়েদীর মালিক, পদিপাড়ার নূর মোহাম্মদ সাহেবের তত্ত্বাবধানে পদিপাড়াতে সমাধিস্থ করা হয়।

 ৮ই মে আমি ভারত থেকে মেজর খালেদ মোশাররফ সাহেবের আদেশক্রমে অস্ত্র আনয়ন করি।

 ৯ই মে-পুনরায় বগাদীয়াতে যুদ্ধঃ ফেনাকাটা যুদ্ধ ও অপারেশনের পর জনসাধারণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে নতুন করে সাহসের সঞ্চার হয়। নায়েক সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে বগাদীয়াতে এ্যামবুশ করার নির্দেশ দিয়ে নায়েক সুবেদার জবেদকে সঙ্গে নিয়ে আমি শত্রুবাহিনীর কর্মতৎপরতা ও অবস্থান লক্ষ করার উদ্দেশ্য চৌমুহনী রওনা হই। চৌমুহনীতে পাকবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ করে বগাদিয়ায় ফেরার পূর্বেই নায়েক সুবেদার ওয়ালী উল্লা পাকবাহিনীর একখানা পিকআপ ভ্যানের একজন জেসিওসহ ছয়জন সৈন্যের উপর আক্রমণ করে। সঙ্গে সঙ্গে শত্রুদের দু'জন সৈন্য (জেসিও) নিহত হয়। গাড়ীখানা রাস্তায় পড়ে যায়। ইতিমধ্যে আমরাও পৌছে গেলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে শত্রুবাহিনীর আরও দু'খানা গাড়ী এসে পড়ল। আরম্ভ হয় উভয়পক্ষের আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ। প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা গোলাগুলী বিমিনয় হয়। অবশেষে শত্রুরা হতাহত সৈন্যদের নিয়ে চৌমুহনীর দিকে চলে যায়। এখানে শত্রুপক্ষের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। এ যুদ্ধে নায়েক সুবেদার ওয়ালীউল্লাহর কপালে গুলী লাগে এবং তিনি সামান্য আহত হন। তিনি এ যুদ্ধে অসামান্য সাহস ও বীরত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাকবাহিনীর উক্ত অকেজো গাড়ীখানা স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ কয়েক মাস রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে থাকে।

 তৎকালীন পাকিস্তান বাজারের পূর্ব দিকে যুদ্ধঃ পাকসেনাদের চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কে আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সেই রাস্তায় এ্যামবুশ করার পরিকল্পনা করি। অবশেষে ১০ই মে এ্যামবুশ করে বসে থাকি। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল একখানা সিভিল বাসে কিছু ছদ্মবেশে ও কিছু সামরিক পোশাকে খানসেনারা লক্ষ্মীপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই বাসের ২/৩ শত গজ পেছনে সামরিক গাড়ীতে আরও বহু পাকসৈন্য অগ্রসহর হচ্ছিল। প্রথম গাড়ীকেই আমরা আঘাত করি। ফলে কয়েকজন সৈন্য প্রাণ হারায়। মুহূর্তে অন্য পাক সৈন্যরা প্রস্তুত হয়ে মর্টার ও আর্টিলারীর সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে আমরা সেখান থেকে পালতে সক্ষম হই।

 ১১ই মে, ১৯৭১-মীরগঞ্জে পাকবাহিনীর পরাজয়ঃ এখানে রেকী করে সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে এ্যামবুশ করার নির্দেশ দেই এবং নায়েক আবুল হোসেনকে রাস্তায় মাইন পুঁততে নির্দেশ দিই। আবুল হোসেন মাইন বসিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। লক্ষ্মীপুরের প্লাটুন কমাণ্ডার হালিদার আব্দুল মতিন ও তার সেকশন নিয়ে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে। কিছুক্ষণ পর শত্রুবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের ভয়ে একখানা গরুর গাড়ী সামনে রেখে অগ্রসর হতে থাকে। গরুর গাড়ীখানা পুঁতে রাখা মাইনের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে